June 29, 2025

শিরোনাম
  • Home
  • অর্থ ও বাণিজ্য
  • এনবিআর-এর অচলাবস্থায় দেশীয় অর্থনৈতিক সংকটের আশঙ্কা ব্যবসায়ী নেতাদের

এনবিআর-এর অচলাবস্থায় দেশীয় অর্থনৈতিক সংকটের আশঙ্কা ব্যবসায়ী নেতাদের

Image

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর চলমান অচলাবস্থার প্রেক্ষাপটে দেশের ব্যবসায়ী ও শিল্প উদ্যোক্তারা শনিবার (২৮ জুন) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। সম্মেলনে বক্তারা বর্তমান পরিস্থিতিকে ‘অশনিসংকেত’ আখ্যা দিয়ে বলেন, অবিলম্বে এই সংকট সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে, নইলে দেশের রপ্তানি, বিনিয়োগ এবং সামগ্রিক অর্থনীতিতে অপূরণীয় ক্ষতি হবে।

বক্তারা বলেন, ১২ মে ২০২৫-এ এনবিআরকে ভেঙে দুটি বিভাগে বিভাজন করে জারিকৃত অধ্যাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে এবং ১৪ মে থেকে দেশব্যাপী কলম বিরতি শুরু হয়। দীর্ঘ আলোচনার পরও অচলাবস্থা নিরসন না হওয়ায় আন্দোলন আরও তীব্রতর হয়েছে এবং আজ (২৮ জুন) থেকে শুরু হয়েছে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’।

এতে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সীমিত কার্যক্রমের কারণে কাঁচামাল খালাস, ইউপি গ্রহণ, কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স ইত্যাদি বিলম্বিত হচ্ছে। এতে রপ্তানিতে লিড টাইম বেড়ে যাচ্ছে এবং বিভিন্ন শিল্পখাতে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। পণ্যের গুণগত মানের ক্ষতি, পোর্ট ডেমারেজের চারগুণ খরচ ও বিদেশি ক্রেতাদের অর্ডার বাতিলের হুমকির কথাও তুলে ধরেন বক্তারা।

বিশেষ করে জুন-জুলাই মাস রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য ‘পিক সিজন’ হওয়ায় এনবিআরের অচলাবস্থা দেশের প্রধান রপ্তানি খাত গার্মেন্টস, চামড়া, সিরামিক, প্লাস্টিক ও ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনছে। এই সময়ে অর্ডার ডেলিভারি ব্যর্থ হলে, তা ভবিষ্যতের ক্রয়াদেশ ও দেশের রপ্তানি সক্ষমতার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে জানান নেতারা।

বক্তারা নিম্নোক্ত সুপারিশমালা উপস্থাপন করেন:

১. আন্দোলনরত এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে আমদানি ও রপ্তানি সংশ্লিষ্ট সেবা কার্যক্রম দ্রুত সচল করতে হবে।

২. এনবিআর পুনর্গঠন নিয়ে সকল অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চা ও জাতীয় বাস্তবতাকে ভিত্তি করে যৌক্তিক সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।

৩. এনবিআরসহ সকল রেগুলেটরি প্রতিষ্ঠানকে হয়রানিমুক্ত, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক করতে হবে।

৪. ব্যবসা-বাণিজ্য ও সাপ্লাই চেইনের উন্নয়নে সময়াবদ্ধ ও সমন্বিত সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নেতৃত্বে অর্থ, বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় গড়ে তুলতে হবে।

৫. এনবিআরের চেয়ারম্যান অপসারণ নয় বরং সমস্যা নিরসনে অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খুঁজে বের করাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনের শেষে বক্তারা বলেন, “এখনই সময় একটি ইনক্লুসিভ আলোচনার মাধ্যমে সংকট নিরসনের। আমরা আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারী ভাই-বোনদের প্রতি আহ্বান জানাই, দেশের বৃহত্তর স্বার্থে কলম বিরতি ও শাটডাউন কর্মসূচি প্রত্যাহার করে অনতিবিলম্বে কাজে যোগদান করুন।”

তারা আরও বলেন, “জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে প্রয়োজন টেকসই সংস্কার, দক্ষ নেতৃত্ব এবং দায়িত্বশীল আচরণ—যার মাধ্যমে দেশ আবারও অর্থনৈতিক গতিশীলতা ফিরে পাবে।”

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আইসিসি বাংলাদেশের সভাপতি মাহবুবুর রহমান, বিসিআই-এর প্রেসিডেন্ট আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী (পারভেজ), বিজিএমইএ প্রেসিডেন্ট মাহমুদ হাসান খান, বিটিএমএ প্রেসিডেন্ট শওকত আজিজ রাসেল, বিকেএমইএ প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হাতেম, এলএফএমইএবি প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, ডিসিসিআই প্রেসিডেন্ট তাসকিন আহমেদ, এমসিসিআই প্রেসিডেন্ট কামরান তানভীর রহমান, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন ও এ.কে. আজাদ, সাবেক উপদেষ্টা তত্ত্বাবধায়ক সরকার তপন চৌধুরী, বিসিএমইএ প্রেসিডেন্ট মঈনুল ইসলাম, বিএফএলএলএফইএ চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন, বিপিজিএমইএ প্রেসিডেন্ট শামীম আহমেদ এবং বিটিএমএ-এর সাবেক সভাপতি এ মতিন চৌধুরী।

Scroll to Top