June 18, 2025

শিরোনাম
  • Home
  • রাজনীতি
  • বিএনপির ইফতার মাহফিলে রাজনৈতিক দলগুলোর মিলনমেলা

বিএনপির ইফতার মাহফিলে রাজনৈতিক দলগুলোর মিলনমেলা

Image

রাজধানীর ইস্কাটনের লেডিস ক্লাবে বুধবার (১৯ মার্চ, ২০২৫) এক বিশেষ ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। এই আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আয়োজনের সভাপতিত্ব করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সমগ্র আয়োজনটি পরিচালনা করেন বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু।

ইফতার পূর্ব আলোচনায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশ্যে তারেক রহমান বলেন, ধর্মীয় উগ্রবাদীদের অপতৎপরতা এবং চরমপন্থা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার পরিচয় দিলে উগ্রবাদী জনগোষ্ঠী এবং পরাজিত ফ্যাসিবাদী অপশক্তি দেশে পুনরায় গণতন্ত্রের কবর রচনা করবে।

রাজনীতিবিদদের উদ্দেশ্যে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের সকলের চিন্তা, ভাবনা হয়তো এক নয়। আমাদের মধ্যে ভিন্ন রাজনৈতিক চিন্তা রয়েছে, ভিন্ন দল-মত-দর্শন রয়েছে। তবে মতে ভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও আমরা কিন্তু সবাই একসঙ্গে বসেছি। এটাই আমাদের বাংলাদেশ। এটি আবহমানকালের ধর্মীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের এক অনন্য প্রতিফলন।

তিনি আরও বলেন, শুধুমাত্র একটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্যই মাফিয়া সরকারের পতন ঘটেনি-এ কথা যেমন সত্য, তার চেয়েও আরও চরম সত্য হয়তো একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন না করার জন্যই মাফিয়া সরকারের নির্মম পতন হয়েছিল। সুতরাং একটি নির্বাচনকে শুধুমাত্র কোনো একটি রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় যাওয়া না যাওয়ার বিষয় হিসেবেই বিবেচনা করার অবকাশ নেই। প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনে জনগণ যার যার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করার সুযোগ পান। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দ্বারা জনপ্রতিনিধিত্বশীল সংসদ এবং সরকার গঠিত হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়। সর্বোপরি, প্রতিটি সফল ও কার্যত নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্র ও সরকারের সঙ্গে নাগরিকদের গণতান্ত্রিক অধিকারের চুক্তি, নবায়িত রাষ্ট্রের সঙ্গে জনগণের মালিকানা সম্পর্ক গভীরতর হয়। রাষ্ট্রে জনগণের মালিকানা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিএনপিসহ গণতন্ত্রের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলো জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে সোচ্চার।

সভাপতির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিভিন্ন খাতের সংস্কার প্রস্তাবগুলো ইতিমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পৌঁছে গেছে। আমি অনুরোধ করবো এগুলো গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে মতামত দেয়ার। যাতে সবাইকে নিয়ে সামনের পথ এগোতে পারি।

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, এই মুহূর্তে ঐক্য অত্যন্ত প্রয়োজন। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যাগুলো নিরসন করা। বিএনপি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হলে দলের ৩১ দফা বাস্তবায়ন করার প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি। গণতন্ত্রের পথে যাওয়ার বিকল্প নেই বিএনপি মহাসচিব বলেন, দ্রুত নির্বাচনের কথা পরিষ্কারভাবে বলছি কারণ জনগণের নির্বাচিত সরকার গঠন করা যায়। নির্বাচিত সরকার প্রয়োজনীয় সংস্কার করবে।

জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে এখনো ফ্যাসিবাদী শক্তি ও তার দোসররা বিভিন্ন জায়গায় রয়ে গিয়েছে। আমরা যেটা বলেছি, ফ্যাসিবাদী সিস্টেমটা পাল্টাতে হবে। বাংলাদেশের নেতৃত্ব আগামীতে যার হাতেই যাক না কেন, একটি পরিবর্তিত ব্যবস্থা প্রয়োজন। তিনি বলেন, একটি কথা বলা হচ্ছে যে, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন (ইনক্লুসিভ ইলেকশন), আমি মনে করি একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করার মতো, দেশের মানুষকে প্রতিনিধিত্ব করার মতো রাজনৈতিক দল বা পক্ষ বাংলাদেশে রয়েছে। আমি রাজনৈতিক দলের প্রতি এই আহ্বানটাও রাখবো যেন এই বিষয়ে আমরা একটি রাজনৈতিক ঐকমত্যে আসতে পারি। আমরা সবসময় এমন এক বাংলাদেশ প্রত্যাশা করেছি, যেখানে রাজনৈতিক শক্তিগুলো, তাদের মধ্যে মতপার্থক্য থাকবে, নীতিগত পার্থক্য, সমালোচনা থাকবে। কিন্তু সবাই একসঙ্গে বসতে পারবো, আলোচনা করতে পারবো দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে। আমরা মনে করি এখন যে পরিবেশ, পরিস্থিতি রয়েছে সেখানে রাজনৈতিক ঐক্যটা থাকবে।

জামায়াতের নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের বলেন, আজকে বাংলাদেশ একটা পরীক্ষার মাঝে অগ্রসর হচ্ছে। ৫ই আগস্টে আমরা একটি বিশাল সফলতা পেয়েছিলাম। তার মূল ছিল সকল শ্রেণির মানুষের ঐক্য। আমি মনে করি, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে একটি সুন্দর সমৃদ্ধ রাষ্ট্র গড়ার জন্য এখনো জাতীয় ঐক্যই হবে সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার। এই ঐক্য রেখেই যার যার জায়গা থেকে যেটি প্রয়োজন, সেটি অবশ্যই আমরা এখানে ইমপ্লিমেন্ট করার চেষ্টা করবো। জামায়াতের পক্ষ থেকে চারটি পয়েন্টে জাতীয় ঐক্যের জন্য আমি সকলের কাছে অনুরোধ জানাই। এক. বাংলাদেশে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব, এখানে কোনো আপস হবে না, দুই. একটি টেকসই গণতন্ত্র, তিন. একটি ফেয়ার নির্বাচন, চার. দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ।

বিএনপি আয়োজিত এই ইফতার মাহফিলে অংশ নেন জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি, ইসলামী আন্দোলন, নাগরিক মঞ্চসহ বিএনপির সমমনা দল ও জোটের নেতারা। এছাড়া, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট কর্নেল (অব.) অলি আহমদ, জামায়াতের নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের, জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ, বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য বহ্নিশিখা জামালী, জেএসডির সিনিয়র সহ সভাপতি তানিয়া রব, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য সুব্রত চৌধুরী, ইসলামী ঐক্য জোটের চেয়ারম্যান আব্দুর রকিব, বিএলডিপি’র সভাপতি শাহদাত হোসেন সেলিম, বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, এনপিপি’র চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ড. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী, জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলমসহ বিভিন্ন দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

বিএনপি’র নেতাদের মধ্যে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, বেগম সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, আবদুল আউয়াল মিন্টু, নিতাই রায় চৌধুরী, শামসুজ্জামান দুদু, ড. আসাদুজ্জামান রিপন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ড. মাহদী আমিন, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীসহ দলটির অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতারা ইফতারে উপস্থিত ছিলেন।

ইফতার মাহফিলের শেষ পর্যায়ে দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনা করে বিশেষ দোয়া পরিচালনা করেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমীর মামুনুল হক। এই ইফতার আয়োজন রাজনৈতিক সংলাপ ও ঐক্যের এক গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হয়ে ওঠে।

Scroll to Top