রবিবার (১৫ জুন, ২০২৫) ঢাকায় রাশিয়ান ফেডারেশনের দূতাবাসে আয়োজন করা হয় এক বর্ণাঢ্য সংবর্ধনা অনুষ্ঠান, রাশিয়া দিবস উদযাপন উপলক্ষে। এ আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন কূটনৈতিক মিশনের সদস্যবৃন্দ, সাংবাদিক, রাজনীতিক, শিক্ষাবিদ, উদ্যোক্তা ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার খোজিন। তিনি রাশিয়ার বিশাল প্রাকৃতিক সম্পদ, বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি এবং সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের কথা তুলে ধরেন। রাষ্ট্রদূত তার বক্তব্যে রাশিয়ার স্বাধীন ও ভারসাম্যপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতির কথা উল্লেখ করেন, যা ইউরেশিয়ায় নিরাপত্তা ও সহযোগিতার একটি সাম্যভিত্তিক কাঠামো গড়ে তুলতে চায়।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা মোহাম্মদ ফাওজুল কবির খান কবির খান। তিনি বাংলাদেশ-রাশিয়া সম্পর্কের শক্ত ভিত স্মরণ করে, জ্বালানি ও কৃষি খাতে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা আরও গভীর করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

অনুষ্ঠানের সাংস্কৃতিক পর্বে মস্কো থেকে আগত “Russian Song Ensemble” পরিবেশন করেন রাশিয়ার ঐতিহ্যবাহী সংগীত আধুনিক আবহে। এই পরিবেশনা দর্শকদের মুগ্ধ করে। এ আয়োজনের পৃষ্ঠপোষকতা করে রাশিয়ান রাষ্ট্রীয় কর্পোরেশন ‘রোসাটম’, যারা পাবনার রূপপুরে বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণে নিয়োজিত।
২০২৫ সালটি রাশিয়ার পারমাণবিক শিল্পের ৮০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। এই শিল্প রাশিয়ার বৈজ্ঞানিক প্রগতি ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়। রূপপুর প্রকল্পে রাশিয়া ও বাংলাদেশের প্রকৌশলী ও প্রযুক্তিবিদরা একযোগে কাজ করে চলেছেন, যার প্রথম ইউনিট এ বছর চালু হওয়ার আশা করা হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে আরও প্রদর্শিত হয় “The Images of Russian History” শীর্ষক একটি চিত্রপ্রদর্শনী, যেখানে রাশিয়ার ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলোকে তুলে ধরা হয়েছে ৩০টি শিল্পকর্মের মাধ্যমে।
রাষ্ট্রদূত খোজিন বলেন, “রাশিয়া দিবস আমাদের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতিফলন। একই সঙ্গে, আমরা ভবিষ্যতের দিকে আশাবাদী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, বাংলাদেশ-রাশিয়া সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে এবং পারস্পরিক সহযোগিতা বিশ্বে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বয়ে আনবে।”
তিনি আরও জানান, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। একাধিক বছর ধরে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি। বিশেষ করে গম, সার এবং জ্বালানি খাতে রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ অংশগ্রহণ রয়েছে। রাশিয়ান কোম্পানি গাজপ্রম ইতোমধ্যে ভোলা জেলায় ২০টি গ্যাস কূপ খনন করেছে এবং দুটি গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করেছে।

রাশিয়া দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার প্রতীক হয়ে ওঠে, যেখানে দুই দেশের ঐতিহাসিক সম্পর্কের পাশাপাশি ভবিষ্যতের সম্ভাবনার কথাও উঠে আসে স্পষ্টভাবে।