জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত সনদে স্বাক্ষর না করার পূর্বের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটি বলেছে, জুলাই সনদ কেবল রাজনৈতিক সমঝোতার ফাঁকা দলিল নয়; বরং এর কার্যকর বাস্তবায়নের জন্য একটি শক্ত আইনি কাঠামো থাকা আবশ্যক।

এক বিবৃতিতে এনসিপি দেশবাসী ও সাংবাদিকদের প্রতি শুভেচ্ছা জানিয়ে জানিয়েছে, “আমরা শুরু থেকেই বলেছি, জুলাই সনদের বাস্তবায়ন আদেশের খসড়া দেখেই এনসিপি স্বাক্ষরের বিষয়ে বিবেচনা করবে।”
দলটি দাবি করেছে, এনসিপির আপোষহীন অবস্থানের ধারাবাহিকতায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সম্প্রতি সরকারের কাছে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের রূপরেখা সুপারিশ করেছে, যা তাদের দৃঢ় অবস্থানেরই ফলাফল। একই সঙ্গে এনসিপি কমিশনের আন্তরিক প্রচেষ্টার প্রশংসা জানিয়েছে।
কমিশন দুটি পৃথক রূপরেখা সুপারিশ করেছে—একটি সংবিধান সম্পর্কিত নয় এমন সংস্কারের জন্য এবং অন্যটি সংবিধান সংশোধনের জন্য। এনসিপি মনে করে, অতি দ্রুত সংবিধান-বহির্ভূত সংস্কারের প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তী সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে।
তবে দলটি জানিয়েছে, ৪৮টি সংস্কার প্রস্তাব সরাসরি সংবিধান সংশোধনের সঙ্গে সম্পর্কিত, যা নিয়ে এতদিন আলোচনাই মূলত চলছিল। এ বিষয়ে কমিশন দুটি পৃথক খসড়া—প্রস্তাব-১ ও প্রস্তাব-২—সুপারিশ করেছে।
এনসিপি স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, সরকারকে অবশ্যই প্রস্তাব-১ গ্রহণ করতে হবে। কারণ এতে ৮(ঙ) ধারায় বলা হয়েছে—নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সংবিধান সংস্কার পরিষদ কাজ শেষ করতে না পারলে, পরিষদ কর্তৃক গৃহীত সংবিধান সংস্কার বিল স্বয়ংক্রিয়ভাবে গৃহীত ও কার্যকর আইন হিসেবে গণ্য হবে। “গণভোটে প্রদত্ত ম্যান্ডেট বাস্তবায়নে বাধ্যবাধকতা তৈরির জন্য এটি অত্যাবশ্যকীয় ধারা, যার নজির বিশ্বের বহু দেশে রয়েছে,” বিবৃতিতে বলা হয়।
অন্যদিকে, প্রস্তাব-২ এ এ বিষয়ে কোনো স্পষ্ট দিকনির্দেশনা না থাকায় পুরো সংস্কার প্রক্রিয়া ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে বলে এনসিপি সতর্ক করেছে। সেজন্য দলটি সরকারকে প্রস্তাব-১ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে।
এছাড়া প্রস্তাব-১ এর কিছু ভাষাগত অস্পষ্টতা দূর করারও তাগিদ দিয়েছে এনসিপি। যেমন, ৮(ক) ধারায় “গাঠনিক ক্ষমতা প্রয়োগ করিতে পারিবে” এর পরিবর্তে “করিবে” উল্লেখ করা উচিত এবং ৮(ঘ) ধারায় “বিবেচনা করিবে” শব্দগুচ্ছের অস্পষ্টতা দূর করা প্রয়োজন।
দলটি আরও জানিয়েছে, গণভোটে অনুমোদিত “সংবিধান সংস্কার বিল” এর খসড়া দ্রুত প্রণয়ন ও জনগণের কাছে উন্মুক্ত করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে এনসিপি সরকারের প্রতি তিনটি সুস্পষ্ট আহ্বান জানিয়েছে—
১. জাতীয় ঐকমত্য কমিশন প্রস্তাবিত জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের প্রথম খসড়া (প্রস্তাব-১) গ্রহণ করে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করতে হবে।
২. সংবিধান সংস্কার বিলের খসড়া দ্রুত প্রণয়ন ও জনগণের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে।
৩. সরকার যদি জুলাই সনদের আইনি ভিত্তিসম্পন্ন খসড়া গ্রহণ করে, তবে সনদে স্বাক্ষরের বিষয়ে এনসিপি ইতিবাচক অগ্রগতি বিবেচনা করবে।











