September 10, 2025

শিরোনাম
  • Home
  • অন্যান্য খবর
  • জলবায়ু উদ্যোগ ও বাণিজ্যে ব্রাজিলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের আহ্বান জানিয়েছেন উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান

জলবায়ু উদ্যোগ ও বাণিজ্যে ব্রাজিলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের আহ্বান জানিয়েছেন উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান

Image

রবিবার (৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫) রাজধানীর হোটেল লে মেরিডিয়ানে ব্রাজিলের ২০৩তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে এক বর্ণাঢ্য সংবর্ধনার আয়োজন করে বাংলাদেশে অবস্থিত ব্রাজিলের দূতাবাস। আয়োজনে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত পাওলো ফার্নান্দো দিয়াস ফেরেস। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার, কূটনীতিক, সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, গণমাধ্যমকর্মী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত পাওলো ফার্নান্দো দিয়াস ফেরেস উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ব্রাজিল ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক দিন দিন গভীরতর হচ্ছে। তিনি উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসানকে আগামী নভেম্বরে ব্রাজিলের বেলেম শহরে অনুষ্ঠিতব্য জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন (কপ৩০)-এ বৈশ্বিক জলবায়ু আলোচনায় অংশগ্রহণের আহ্বান জানান। রাষ্ট্রদূত সাম্প্রতিক সাওপাওলোতে অনুষ্ঠিত “Made in Bangladesh Exhibition-2025”–কে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদারের এক মাইলফলক হিসেবে উল্লেখ করেন।

উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান তার বক্তব্যে বলেন, কপ৩০-এ বৈশ্বিক জলবায়ু আলোচনায় ব্রাজিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এবং বাংলাদেশ উচ্চাভিলাষী কিন্তু অন্তর্ভুক্তিমূলক ফলাফলের লক্ষ্যে ব্রাজিলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে প্রস্তুত। তিনি জানান, সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ সংরক্ষণে কার্বন বাজার (আর্টিকেল ৬) ব্যবহারের সম্ভাবনা বাংলাদেশ খতিয়ে দেখছে, তবে জলবায়ু অর্থায়নের প্রতিশ্রুতির বিকল্প নয় বলে তিনি জোর দেন।

বাংলাদেশ-ব্রাজিল বাণিজ্য সম্পর্ক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ২০২৪ সালে প্রায় ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার লেনদেনের মাধ্যমে ব্রাজিল বর্তমানে লাতিন আমেরিকায় বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার। তিনি বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের জন্য ব্রাজিলীয় তুলায় বাজার সুবিধা, বাংলাদেশের পাটজাত পণ্যের ওপর অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক প্রত্যাহার, ওষুধ নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজীকরণ এবং যৌথ বিনিয়োগ বৃদ্ধির আহ্বান জানান। সম্প্রতি একটি বাংলাদেশি ওষুধ কোম্পানিকে ব্রাজিল কর্তৃক অনুমোদনকে তিনি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করেন।

তিনি বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের পক্ষ থেকে ব্রাজিলের সরকার ও জনগণকে উষ্ণ শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ১৮২২ সালের ৭ সেপ্টেম্বর ব্রাজিলের স্বাধীনতা অর্জন ছিল বিশ্ব ইতিহাসের এক তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। তিনি গণতন্ত্র, সাম্য, জলবায়ু উদ্যোগ ও বহুপাক্ষিকতায় ব্রাজিলের নেতৃত্বের প্রশংসা করেন।

উপদেষ্টা স্মরণ করিয়ে দেন, ১৯৭২ সালের ১৫ মে ব্রাজিল ছিল দক্ষিণ আমেরিকার প্রথম দেশগুলোর একটি যারা বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক—যেমন ২০২৪ সালের এপ্রিলে ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মৌরো ভিয়েরার ঢাকা সফর, বাংলাদেশ কর্তৃক ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত জি-২০ নারী ক্ষমতায়ন সম্মেলনে অংশগ্রহণ এবং ব্রাজিলের প্রধান বিচারপতি আন্তোনিও হারমান বেঞ্জামিনের বাংলাদেশ সফর—দুই দেশের সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করেছে।

তিনি বলেন, মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকার অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসনব্যবস্থা, আইনের শাসন ও জবাবদিহিতা জোরদারে সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নিচ্ছে। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষায় ব্রাজিলের সমর্থনের প্রশংসা করে তিনি ব্রাজিলকে ন্যায়বিচার ও সমতার অনুপ্রেরণাদায়ী অংশীদার হিসেবে উল্লেখ করেন।

উপদেষ্টা আরও জানান, কৃষি, প্রতিরক্ষা, স্বাস্থ্য ও ক্রীড়া খাতে চারটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) চূড়ান্ত হয়েছে এবং তথ্যপ্রযুক্তি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও বাণিজ্য সংলাপসহ ১১টি বিষয়ে আলোচনার অগ্রগতি হচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ জ্বালানি ও টেকসই কৃষিতে ব্রাজিলের অভিজ্ঞতা থেকে শিখতে চায়, একইসঙ্গে দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস ও সম্প্রদায়ভিত্তিক সহনশীলতায় বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে আগ্রহী।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ-ব্রাজিলের জনগণের মধ্যে ঐতিহ্যবাহী বন্ধন বিদ্যমান, যার উজ্জ্বল প্রতীক বাংলাদেশের মানুষের ব্রাজিলীয় ফুটবলের প্রতি গভীর অনুরাগ। তিনি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে বাণিজ্য, গণতন্ত্র, জলবায়ু উদ্যোগ ও সংস্কৃতিতে আরও এগিয়ে নেওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বক্তব্য শেষ করেন—“বাংলাদেশ-ব্রাজিল বন্ধুত্ব অটুট থাকুক।”

Scroll to Top