গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা এলাকায় অবস্থিত মাহমুদ জিন্স লিমিটেড কারখানায় সংঘটিত একটি হামলার ঘটনা দেশের পোশাক শিল্পে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। পোশাক শিল্প বর্তমানে বহুবিধ সংকট কাটিয়ে ধীরে ধীরে স্থিতিশীলতার দিকে অগ্রসর হলেও এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা শিল্পের পরিবেশকে আবারো প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
বিজিএমইএ এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং এটিকে দেশের অর্থনীতি ও শিল্পের জন্য বড় হুমকি হিসেবে অভিহিত করেছে। সংগঠনটি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ এবং কারখানাগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে।
মাহমুদ জিন্স লিমিটেড একটি কমপ্লায়েন্ট কারখানা, যা ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক এক ক্রেতার কাছ থেকে বড় অর্ডার পেয়ে ১২০ কোটি টাকার ইয়ার্ন কিনেছিল। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং কোভিড পরবর্তী পরিস্থিতি সেই অর্ডার স্থগিত করে দেয়। এছাড়া গ্যাস সরবরাহের অভাবও কারখানার কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করে।
চলমান সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে ৯ অক্টোবর কলকারখানা অধিদপ্তরের ত্রিপক্ষীয় সিদ্ধান্তে কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর ২৩ অক্টোবর শ্রমিকদের সেপ্টেম্বর মাসের বেতন এবং ১৬ নভেম্বর স্টাফদের বকেয়া মজুরি পরিশোধ করা হয়। তবে, ২৮ নভেম্বর শ্রমিক ও স্টাফদের চূড়ান্ত পাওনা পরিশোধে মালিকপক্ষ সম্পদ বিক্রির প্রস্তুতি নিলেও অর্থ সংকটের কারণে তা সম্ভব হয়নি।
এই কঠিন পরিস্থিতিতে, কারখানার মালিকের ছেলে মো. রাফি মাহমুদ শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করতে গেলে কিছু উস্কানিদাতা তাকে আক্রমণ করে আহত করে এবং কারখানায় আটক রাখে। পরে সেনাবাহিনী ও শিল্প পুলিশ তাকে উদ্ধার করে।
বাংলাদেশের পোশাক শিল্প দেশের প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিকের কর্মসংস্থান এবং ৫ কোটি মানুষের জীবিকা নির্বাহের প্রধান উৎস। এই শিল্প আন্তর্জাতিক বাজারে দেশের একটি ইতিবাচক অবস্থান তৈরি করেছে।
তবে, মাহমুদ জিন্সে হামলার মতো ঘটনা শিল্পের সুনাম ক্ষুণ্ণ করতে পারে। বিজিএমইএ এই ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে শিল্পের শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সরকার, উদ্যোক্তা ও শ্রমিক নেতাদের সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে।
পোশাক শিল্পের অগ্রগতির জন্য শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা অপরিহার্য। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সরকার ও সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সমন্বিত প্রচেষ্টা এখন সময়ের দাবি।