ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড সেক্রেটারীজ অব বাংলাদেশ (আইসিএসবি) বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখ আইডিইবি ভবন, কাকরাইল, ঢাকাতে “Strengthening Governance Framework-Way Forward to a Vibrant Capital Market” শীর্ষক সেমিনার আয়োজন করে।
সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার জনাব মোহাম্মদ মহসিন চৌধুরী। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে যথাক্রমে উপস্থিত ছিলেন ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)-এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমেদ এবং পুঁজি বাজার সংস্কার টাস্কফোর্সের সদস্য জনাব কে. এ. এম. মাজেদুর রহমান।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (ডিবিএ)-এর সভাপতি জনাব সাইফুল ইসলাম; এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)-এর প্রোডাক্ট ও মার্কেট ডেভেলপমেন্ট বিভাগের উপ-মহাব্যবস্থাপক জনাব সাইয়িদ মাহমুদ জুবায়ের।
এছাড়াও আলোচক হিসেবে সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)-এর চিফ ফিনান্সিয়াল অফিসার (সিএফও) ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) জনাব এ.জি.এম. সাত্ত্বিক আহমেদ শাহ, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব এম. সাইফুর রহমান মজুমদার এফসিএ, এফসিএমএ এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)-এর পরিচালক জনাব মিনহাজ মান্নান ইমন।
অনুষ্ঠানটি সভাপতিত্ব করেন আইসিএসবি-এর প্রেসিডেন্ট-ইন-চার্জ জনাব এম নূরুল আলম এফসিএস এবং অনুষ্ঠানে সূচনা-বক্তব্য প্রদান করেন আইসিএসবি-এর সেক্রেটারি ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব মোঃ জাকির হোসেন।
আইসিএসবি-এর সেক্রেটারি ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব মোঃ জাকির হোসেন আইসিএসবি এবং চার্টার্ড সেক্রেটারী পেশা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোকপাত করেন। তিনি সেমিনারে অংশগ্রহণের জন্য উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানান। একইসাথে তিনি সেমিনারের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে তুলে ধরেন এবং সময়োপযোগী এই আয়োজনের জন্য সেমিনার এন্ড কনফারেন্স সাব কমিটিকে বিশেষ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
আইসিএসবি-এর প্রেসিডেন্ট-ইন-চার্জ জনাব এম. নুরুল আলম এফসিএস তার স্বাগত বক্তব্যে উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ও পুঁজি-বাজারে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং সম্পদ সৃষ্টিতে এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি সেমিনারের মূল প্রতিপাদ্য হিসেবে বাজারের দক্ষতা, স্বচ্ছতাবৃদ্ধি এবং এক্ষেত্রে সম্ভাব্য নানান প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করা এবং সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে উল্লেখ করেন। একইসাথে এই ক্ষেত্রে তিনি নানাবিধ উদ্ভাবন এবং পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির আহ্বান জানান: বাংলাদেশে একটি টেকসই পুঁজি-বাজার গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে যৌথ প্রচেষ্টার প্রয়োজনীয়তার বিষয়েও আলোকপাত করেন।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপক জনাব সাইফুল ইসলাম তার প্রবন্ধে বাংলাদেশে পুঁজি-বাজারকে অধিকতর শক্তিশালী করতে প্রয়োজনীয় সংস্কারের প্রস্তাবনা রাখেন: এছাড়াও স্বীকৃত আইপিও, উন্নত বাজার নিয়ন্ত্রণ কাঠামো এবং তালিকাভুক্ত কোম্পানিসমূহের জন্য প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে কর প্রণোদনা ইত্যাদির বিষয়েও তিনি প্রবন্ধে গুরুত্বারোপ করেন। তিনি পুঁজি-বাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি, পুঁজি-বাজার সংশ্লিষ্ট শিক্ষার প্রসার এবং এই খাতে প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকে উৎসাহিত করার নানাবিধ কৌশল সম্পর্কেও আলোকপাত করেন। এছাড়া তিনি শক্তিশালী কর্পোরেট গভর্ন্যান্স, ইএসজি রিপোর্টিং এবং পাবলিক-প্রাইভেট-পার্টনারশিপ (পিপিপি)-এর গুরুত্বও তুলে ধরেন। তার প্রস্তাবনাসমূহের মধ্যে অন্যতম ছিল কার্যকরী নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, পুজি-বাজারের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা এবং রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানসমূহকে তালিকাভুক্ত করার মাধ্যমে বাজারে অংশগ্রহণকে বৈচিত্র্যময় করে তোলা।
জনাব সাইয়িদ মাহমুদ জুবায়ের তার মূল প্রবন্ধে উল্লেখ করেন যে, বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনঃর্নিমাণের জন্য শক্তিশালী গভর্নেন্স, স্বচ্ছতা এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থা সমূহের নিবিড় তত্ত্বাবধানের প্রয়োজন। তিনি পুঁজি-বাজারের অস্থিরতা, দুর্বল আইপিও অংশগ্রহণ এবং সীমিত বিদেশী বিনিয়োগের মতো চ্যালেঞ্জসমূহ সম্পর্কে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। প্রস্তাবিত সমাধানসমূহের মধ্যে রয়েছে নিয়ন্ত্রনবিধির সংস্কার, কর্পোরেট গভর্ন্যান্স ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং নানাবিধ প্রতিষ্ঠানিক অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করেন। তিনি বাংলাদেশের ক্রমপ্রসারমান ও উন্নয়নশীল অর্থনীতিকে কাজে লাগিয়ে সমন্বিত সংস্কারের মাধ্যমে পুঁজি বাজারকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির একটি শক্তিশালী চালিকাশক্তিতে পরিণত করার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।
সেমিনারের বিশেষ অতিথি ক্যাপিটাল মার্কেট রিফর্ম টাস্কফোর্সের সদস্য জনাব কে এ এম মাজেদুর রহমান পুঁজিবাজারের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তোলা সহ পুঁজি বাজারকে ব্যাংকিং খাতের তুলনায় আরও আকর্ষণীয় করার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন। তিনি শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে কার্যকর ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার জন্য নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানান। পেশাদারিত্ব ও নৈতিকতার গুরুত্ব তুলে ধরে, তিনি চার্টার্ড সেক্রেটারী পেশায় নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধির জন্য উৎসাহ দেন এবং কর্পোরেট সেক্টরের শীর্ষ পর্যায়ের নির্বাহী হিসেবে চার্টার্ড সেক্রেটারীগণের অংশগ্রহণ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে বলেও আশা প্রকাশ করেন।
বিশেষ অতিথি ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)-এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহম্মেদ বিনিয়োগের ভিত্তি বিস্তৃত করার লক্ষ্যে আইসিবি প্রতিষ্ঠার জন্য যারা অবদান রেখেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি ভর্তুকির পরিবর্তে স্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতার উপর জোর দেন। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, ফ্লোর প্রাইসিং পুঁজিবাজারের জন্য ক্ষতিকর। তিনি প্রত্যাশা করেন যে, সুদের হার ক্রমশ হ্রাস পাবে। অধ্যাপক আহমেদ বলেন যে, বাংলাদেশের একটি ভালো ভাবমূর্তি রয়েছে এবং এই দেশ কখনো ঋণ খেলাপি হয়নি। তিনি আরও প্রত্যাশা করেন যে, বাংলাদেশ সঠিক পথে রয়েছে এবং শীঘ্রই পুঁজিবাজারের সুশৃঙ্খলা ও উন্নত ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠিত হবে।
প্রধান অতিথি জনাব মোঃ মহসিন চৌধুরী পুঁজি বাজারের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রে অবদান সহ অন্যান্য সহায়ক ভূমিকা তুলে ধরেন। তিনি প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এবং পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের নতুন ধরণের প্রত্যাশার কারণে পুঁজি বাজারে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জ সমূহ মোকাবেলার ক্ষেত্রে ফিন-টেক, ব্লকচেইন এবং এআই-এর এর মত আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে বাস্তবিক ধারনা অর্জনের প্রয়োজনীয়তা ও বাস্তবতার গুরুত্ব তুলে ধরেন।
প্রধান অতিথি তার দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্যে পুজি-বাজারের ক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থা গড়ে তোলার পরামর্শ প্রদান করেন; যাতে স্বচ্ছতা এবং পুঁজি-বাজারের দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা যায়, একইসাথে যেন এই খাতের নানাবিধ উদ্ভাবনকেও উৎসাহিত করা হয়। অধিকন্তু তিনি টেকসই পুজি-বাজার গড়ে তোলার ক্ষেত্রে নৈতিক বিনিয়োগ সহ সংশ্লিষ্ট অনুষঙ্গ সমূহের গুরুত্ব রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন; এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট পক্ষসমূহের ইএসজি সংক্রান্ত বিবেচনা সমূহকে অগ্রাধিকার প্রদানের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি ৪পি অর্থাৎ পিপল (মানুষ), প্রসেস (প্রক্রিয়া), পারফরম্যান্স (কর্মদক্ষতা) এবং পারপাস (উদ্দেশ্য) অনুসরণ করা জরুরি বলে মতামত প্রদান করেন। এছাড়া তিনি মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) স্তর থেকেই আর্থিক খাত সংশ্লিষ্ট শিক্ষার প্রসার এবং সচেতনতা বৃদ্ধির ওপর জোর দেন।
তিনি একটি সময়োপযোগী সেমিনার আয়োজনের জন্য তিনি আইসিএসবি-কে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে বিএসইসি এবং আইসিএসবি একসাথে কাজ করবে এবং চার্টার্ড সেক্রেটারিগণ বাংলাদেশে সুশাসন বজায় রাখতে অনন্য এবং অনুসরনীয় ভূমিকা পালন করবে।
অনুষ্ঠানে আইসিএসবি-এর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সদস্য উপস্থিত ছিলেন, যার মধ্যে ছিলেন জনাব এ. কে. এম. মুশফিকুর রহমান এফসিএস, ভাইস প্রেসিডেন্ট, জনাব সেলিম আহমেদ এফসিএস, কাউন্সিল সদস্য, জনাব অলি কামাল এফসিএস, কাউন্সিল সদস্য, জনাব মো. শরিফ হাসান এফসিএস, কাউন্সিল সদস্য এবং সরকারি কর্মকর্তা ও বিভিন্ন ক্ষেত্রের পেশাজীবীগণ। আলোচনা পর্বের পর একটি প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে অধিবেশনের চেয়ারম্যান অংশগ্রহণকারীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
পরিশেষে আইসিএসবি-এর কাউন্সিল সদস্য ও সেমিনার এন্ড কনফারেন্স সাব কমিটির সদস্য জনাব মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া এফসিএস অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথি, মূল প্রবন্ধ উপস্থাপক, আলোচকবৃন্দ, আইসিএসবি-এর সদস্যবৃন্দসহ অংশগ্রহণকারী সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।