বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়নের জন্য সুশাসন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। তিনি বলেন, দেশে যারা ধনী হয়েছেন—তাদের অনেকেই ব্যাংক ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ করেননি। দীর্ঘদিন ধরে ‘ক্রোনি ক্যাপিটালিজম’-এর মাধ্যমে বিশেষ সুবিধাভোগীরা ধনী হয়েছেন, যা অর্থনৈতিক কাঠামোকে দুর্বল করেছে। তবে তিনি শুধু ব্যবসায়ীদের দায়ী না করে বলেন, ব্যবস্থাটিই বহু বছর ধরে এমন ছিল। ব্যবসায়ীরা উৎপাদন ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে সম্পদ গড়ে তুলবে—এটাই হওয়া উচিত। সরকারের পক্ষ থেকে বেসরকারিখাতের উন্নয়ন ও বিনিয়োগের জন্য আরও সুযোগ উন্মুক্ত করা হবে বলেও তিনি জানান।

বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (বিডা) আয়োজিত ‘ইনভেস্টমেন্ট ডায়ালগ উইথ লোকাল পার্টনার্স’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন তিনি। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ. মনসুর।
গভর্নর ড. মনসুর বলেন, দেশের অর্থনৈতিক নীতিমালা স্বাধীনভাবে প্রণীত হয় এবং তা আইএমএফ বা বিশ্বব্যাংকের নির্দেশনার ওপর নির্ভরশীল নয়। তিনি সতর্ক করে বলেন, যদি অন্ধভাবে আইএমএফের সব শর্ত অনুসরণ করা হতো, তাহলে ডলারের বিনিময় হার ১৭০–১৮০ টাকায় পৌঁছে যেতে পারত—যেমনটি পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায় দেখা গেছে।
তিনি জানান, চলতি ২০২৫–২৬ অর্থবছরের শেষে মূল্যস্ফীতি ৫ শতাংশে নামার সম্ভাবনা রয়েছে। সে অনুযায়ী নীতি সুদহার ৮–৯ শতাংশে এবং ব্যাংকঋণের সুদহার ১০–১১ শতাংশে স্থিতিশীল হবে। তবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ছাড়া সুদের হার কমানো হলে মুদ্রাবাজারে অস্থিরতা দেখা দিতে পারে বলেও তিনি সতর্ক করেন। ভারত ও চীনের নিম্ন সুদহারের উদাহরণ উল্লেখ করে তিনি বলেন—তাদের অর্থনৈতিক বাস্তবতা বাংলাদেশের থেকে আলাদা।

ড. মনসুর আরও বলেন, পূর্ববর্তী সরকারের সময়ে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বিকৃত করে উপস্থাপন করা হয়েছিল। সরকারি হিসাবে মুদ্রাস্ফীতি ছিল এক অঙ্কে, অথচ বাস্তবে তা ছিল ১২–১৩ শতাংশ। খেলাপি ঋণ দেখানো হতো এক অঙ্কে, যেখানে প্রকৃত হার ছিল প্রায় ৩৫ শতাংশ। তিনি জানান, বর্তমানে এসব তথ্য সংশোধন করা হয়েছে এবং আর্থিক খাতকে স্বচ্ছতায় ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
খেলাপি ঋণ পুনর্গঠনের বিষয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকে ১,৩০০ আবেদন এসেছে, যার মধ্যে ২৫০টি অনুমোদিত হয়েছে। বাকিগুলো সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে পাঠানো হয়েছে। আগামী মার্চের মধ্যে খেলাপি ঋণ ৫ শতাংশ কমার আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, পুরো খেলাপি ঋণ টেকসই পর্যায়ে আনতে আরও ৮–১০ বছর সময় লাগবে।
তিনি শিল্পসম্পদ বিক্রি করে ঋণ উদ্ধার নিয়ে বলেন, ব্যক্তিগত দুর্নীতির দায়ে কোনো শিল্পকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো উচিত নয়। স্যালাম গ্রুপের এসএস পাওয়ার প্ল্যান্টের উদাহরণ উল্লেখ করে তিনি বলেন—২.৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের এই প্রকল্পে ৮০ শতাংশ বিদেশি মালিকানা রয়েছে এবং প্রকল্পটি চালু থাকলেও প্রতিষ্ঠানটি লাভ পাবে না; সমস্ত আয় চলে যাবে ঋণ পরিশোধে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন আন্তর্জাতিক বিষয়ক প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী এবং এনবিআর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুর রহমান খান। সভার সভাপতিত্ব করেন বিডা ও বেজা এর নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন।











