August 4, 2025

শিরোনাম
  • Home
  • অর্থ ও বাণিজ্য
  • স্বচ্ছ, গতিশীল ও কার্যকর বিজিএমইএ এবং টেকসই অ্যাপারেল খাত গড়তে ফোরামের প্রতিশ্রুতি

স্বচ্ছ, গতিশীল ও কার্যকর বিজিএমইএ এবং টেকসই অ্যাপারেল খাত গড়তে ফোরামের প্রতিশ্রুতি

Image

আসন্ন বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) নির্বাচন ২০২৫-২৭ উপলক্ষে রোববার (১১ মে, ২০২৫) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের পদ্মা হলে এক ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ‘ফোরাম’। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্যানেল লিডার মাহমুদ হাসান খান (বাবু) সহ ফোরামের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ।

অনুষ্ঠানে ফোরাম নেতৃবৃন্দ বলেন, বর্তমানে দেশের গার্মেন্টস খাত দেশীয় ও বৈশ্বিক নানা প্রতিকূলতার মুখোমুখি। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দীর্ঘমেয়াদি ও সুনির্দিষ্ট নীতিমালার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন তারা। এই প্রেক্ষাপটে গার্মেন্টস খাতের জন্য একটি স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় গঠনের আহ্বান জানানো হয়।

বক্তব্যে মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, “দেশের সর্ববৃহৎ রপ্তানি খাত হচ্ছে গার্মেন্টস শিল্প, যা প্রায় ৮৪ শতাংশ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে অবদান রাখে। এটি অর্থনীতি, কর্মসংস্থান, নারীর ক্ষমতায়ন ও জাতীয় উন্নয়নের প্রধান চালিকাশক্তি হলেও এখনো কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে অনেক দূর এগোতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “বিজিএমইএ একটি গুরুত্বপূর্ণ ট্রেড বডি হিসেবে শিল্পের স্বার্থ রক্ষায় আরও কার্যকর, পেশাদার ও স্বচ্ছ ভূমিকা রাখতে হবে। ফোরাম বিশ্বাস করে, এই সংগঠনকে আরও গতিশীল, জবাবদিহিমূলক ও আধুনিক করে গড়ে তুলতে হলে নেতৃত্বে ইতিবাচক পরিবর্তন প্রয়োজন।”

ফোরাম একযোগে ৯টি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনা উপস্থাপন করে, যেগুলোর মাধ্যমে তারা গার্মেন্টস শিল্পকে আধুনিক, জবাবদিহিমূলক ও টেকসই পথে এগিয়ে নিতে চায়। প্রস্তাবনাগুলোর মধ্যে রয়েছে:

১. পোশাক খাতের জন্য একটি পৃথক মন্ত্রণালয় গঠন:
পোশাক খাতের জন্য সরকারের নীতিগত সহায়তা অব্যাহত রাখতে হবে। বর্তমানে, পোশাক খাত-সম্পর্কিত যেকোনো বিষয়ে, আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপর নির্ভর করি। তবে, এর বিভিন্ন দায়িত্বের কারণে, এটি পোশাক খাতের জন্য পর্যাপ্ত সময় দিতে অক্ষম। অতএব, আমরা বস্ত্র মন্ত্রণালয়কে “বস্ত্র ও পোশাক শিল্প মন্ত্রণালয়”-এ পুনর্গঠনের প্রস্তাব করছি।

২. ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, নন-বন্ড কারখানা এবং নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য সর্বাধিক সহায়তা:
পোশাক খাতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা যে চ্যালেঞ্জগুলির মুখোমুখি হচ্ছেন তা দীর্ঘস্থায়ী। আমাদের মনে রাখতে হবে যে আজকের ছোট ব্যবসাগুলি আগামীকালের প্রধান শিল্পে পরিণত হতে পারে। অতএব, কম সুদের ঋণ, প্রযুক্তিগত সহায়তা এবং বাজার অ্যাক্সেস তহবিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৩. শুল্ক অটোমেশন ত্বরান্বিত করা:
আমরা শুল্ক নিরীক্ষার কারণে সৃষ্ট হয়রানি এড়াতে চাই। আমরা নিরীক্ষা প্রক্রিয়ার জন্য সর্বোচ্চ-র্যাঙ্কযুক্ত অডিট সংস্থাগুলিকে জড়িত করার এবং রপ্তানি-আমদানি প্রক্রিয়ায় সময় এবং খরচ কমাতে একটি ডিজিটাল ক্লিয়ারেন্স সিস্টেম চালু করার প্রস্তাব করছি।

৪. শিল্প নিরাপত্তা, শ্রম অধিকার এবং পরিবেশগত সুরক্ষা:
পোশাক খাত এখন ৪৫ বছর বয়সী, তবুও এটি সম্পূর্ণরূপে টেকসই নয়। এটিকে টেকসই করার জন্য, আমাদেরকে ব্যাপক শাসন এবং সম্মতি সার্টিফিকেশন ব্যবস্থার মাধ্যমে শিল্প নিরাপত্তা, শ্রম অধিকার এবং পরিবেশগত সুরক্ষাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

৫. প্রকৃত রপ্তানিকারকদের সদস্যপদ নিশ্চিত করা:
BGMEA-এর বর্তমান সদস্য সংখ্যা ৭,০০০ ছাড়িয়ে গেছে। তবে, সঠিক মান বজায় না রেখেই অনেককে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ফোরাম কর্তৃক এটি কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে।

৬. বাজার বৈচিত্র্যকরণ এবং পণ্য বৈচিত্র্যকরণ:
বাংলাদেশের পোশাক বাজার মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইইউ-এর মধ্যে সীমাবদ্ধ। বাজার বৈচিত্র্যকরণের পাশাপাশি, আমরা পণ্য বৈচিত্র্যকরণের উপর মনোযোগ দিতে চাই, শুধুমাত্র তুলা-ভিত্তিক পণ্যের উপর নির্ভর না করে মানবসৃষ্ট তন্তুর দিকে অগ্রসর হতে চাই।

৭. নির্বাচিত প্রতিনিধিদের জবাবদিহিতা:
প্রার্থীরা প্রায়শই নির্বাচনের আগে অসংখ্য প্রতিশ্রুতি দেন কিন্তু পরে তা পূরণ করতে ব্যর্থ হন। ফোরামের পরিচালকদের সদস্যদের কাছে জবাবদিহি করতে হবে, প্রত্যেকে ৫০-৭০টি কারখানা তত্ত্বাবধান করবে, যেমন বহুজাতিক কোম্পানিতে সম্পর্ক ব্যবস্থাপকদের ভূমিকা।

৮. শিল্প অঞ্চল ভিত্তিক সংকট ব্যবস্থাপনা সেল:
বর্তমানে, বিজিএমইএ-এর সংকট ব্যবস্থাপনা সেল কেন্দ্রীয়ভাবে কাজ করে। আমরা বিজিএমইএ কর্মকর্তা এবং শ্রমিক ফেডারেশনের নেতাদের সহ সংশ্লিষ্ট এলাকার পরিচালকদের নেতৃত্বে জোনাল সংকট ব্যবস্থাপনা সেল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করছি।

৯. বহির্গমন নীতি:
বর্তমানে, অসুস্থ শিল্পের জন্য কোনও কাঠামোগত বহির্গমন নীতি নেই। আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাথে পরামর্শ করে একটি বাস্তবসম্মত বহির্গমন নীতি প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করছি।

ফোরাম জানায়, ঢাকায় ২৬ এবং চট্টগ্রামে ৯ জন মিলিয়ে মোট ৩৫ জন পরিচালক প্রার্থীকে নির্বাচন করা হয়েছে, যাঁরা ব্যবসায়িক দক্ষতা, অভিজ্ঞতা এবং প্রযুক্তি-ভিত্তিক চিন্তাভাবনার সমন্বয়ে নির্বাচন করছেন। এই নির্বাচনকে ঘিরে তারা একটি শক্তিশালী, আধুনিক এবং সম্মানজনক বিজিএমইএ গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনের শেষাংশে মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, “এই শিল্প আমাদের অর্থনীতির মেরুদণ্ড, কিন্তু নেতৃত্বের অভাব এবং দূরদর্শিতার ঘাটতি এর গতিকে শ্লথ করে দিচ্ছে। আমরা ফোরামের পক্ষ থেকে সদস্যদের আহ্বান জানাচ্ছি—আসুন, সকলে মিলে গড়ি একটি দক্ষ, জবাবদিহিমূলক ও টেকসই বিজিএমইএ।”

Scroll to Top