বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগকারিদের আগ্রহ ও বিনিয়োগ প্রবণতা বিষয়ে একটি শিল্প সংগঠনের প্রতিনিধির সাম্প্রতিক মন্তব্য বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে। তিনি দাবি করেছেন, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) কেবলমাত্র G2G প্রকল্পে জড়িত এবং গত আট মাসে দেশে নতুন কোনো বিদেশি বিনিয়োগ আসেনি। তিনি আরও উল্লেখ করেন, বিডা দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারিদের মধ্যে কার্যকর সংযোগ স্থাপনে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। পাশাপাশি, তিনি মত প্রকাশ করেন যে বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যৌথ উদ্যোগে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাবেন না। এই সকল মন্তব্যের প্রেক্ষিতে সঠিক ও প্রাসঙ্গিক তথ্য নিচে উপস্থাপন করা হলো।
- অক্টোবর ২০২৪ হতে মার্চ ২০২৫ পর্যন্ত নেট বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে মোট ৭৫৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ৯,২৪৭ কোটি টাকা)।
- বিগত নয় মাসে:
o বিডা মোট ৭৩৯টি শিল্প প্রকল্প নিবন্ধিত করেছে, তার মধ্যে শতভাগ বিদেশি প্রকল্প রয়েছে ৬৬টি এবং যৌথ বিনিয়োগ রয়েছে ৬১টি।
o বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) ১৬টি প্রতিষ্ঠান এর সাথে জমি ইজারা চুক্তি সম্পাদন করেছে, যার মধ্যে শতভাগ বিদেশি প্রকল্প রয়েছে ৬টি এবং যৌথ বিনিয়োগ রয়েছে ৩টি।
o বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা) মোট ৩১টি প্রতিষ্ঠান এর সঙ্গে ইজারা চুক্তি করেছে।
o সব মিলিয়ে মোট প্রস্তাবিত বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে প্রায় ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (১২,২২০ কোটি টাকা)।
বিদেশি বিনিয়োগ ধারা সম্বন্ধে এ ধরনের ঢালাও মন্তব্য দুঃখজনক যা বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। আমরা আশা করছি যে বিনিয়োগ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জনসম্মুখে দেয়া মন্তব্য সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে প্রদান করা হবে, যাতে করে জনসাধারণ ও ব্যবসায়ী মহলের মধ্যে বিভ্রান্তি বা উদ্বেগ সৃষ্টি না হয়।
বিডা’র মূল দায়িত্ব নীতিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের মাধ্যমে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলা এবং দেশি-বিদেশি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে অর্থবহ সংযোগ সৃষ্টি করে একটি শক্তিশালী বিনিয়োগ পাইপলাইন গঠন করা। বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট ২০২৫-এ নির্দিষ্ট খাতভিত্তিক সেশনের মাধ্যমে B2B নেটওয়ার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়, যা ব্যবসায়ী চেম্বার, ব্যাংক ও বেসরকারি খাতের অন্যান্য অংশীদারদের সক্রিয় সহযোগিতায় আয়োজিত হয়। আগামী সপ্তাহে একটি উচ্চপর্যায়ের চীনা ব্যবসায়িক প্রতিনিধিদলের জন্য বস্ত্র, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও ইলেকট্রনিক্স খাতে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সাথে ১০০টি B2B বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে। উল্লেখ্য, প্রস্তাবিত বিনিয়োগ পরিপক্বতা লাভে সময় প্রয়োজন হয়, যা বিনিয়োগ প্রচারের ক্ষেত্রে একটি স্বীকৃত বাস্তবতা।
বিনিয়োগকারিদের সহায়তা প্রদান বিডার কার্যক্রমের অন্যতম প্রধান ভিত্তি, এবং আমরা শিল্প নেতৃবৃন্দের সাথে যৌথভাবে জ্ঞান, দক্ষতা ও বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে উচ্চমানের FDI আকর্ষণে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার প্রত্যাশা করছি।