বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের অগ্রযাত্রা আজ বিশ্বদরবারে এক সফলতার প্রতীক। এই উত্তরণের পেছনে যাঁদের নিরলস শ্রম, দূরদৃষ্টি ও নেতৃত্ব রয়েছে, তাঁদের মধ্যে অন্যতম ফারুক এম. হাসান—যিনি শুধু একজন সফল ব্যবসায়ী নন, বরং আধুনিক গার্মেন্টস শিল্পের রূপকার, নীতিনির্ধারক এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের পরিচিত মুখ।
পাবনার হোসিয়ারি শিল্পের গোড়াপত্তন হয় বহু পূর্বে। ষাটের দশকে যারযিস হোসেন এবং হালিম হোসিয়ারির হাত ধরে প্রথমবারের মতো লিবিয়ায় রফতানি হয় টি-শার্ট। এই রপ্তানি দিয়ে শুরু হয় বাংলাদেশের নীট শিল্পের আন্তর্জাতিক অভিযাত্রা। সেই ধারাবাহিকতায় নব্বইয়ের দশকে একদল তরুণ উদ্যোক্তা এ শিল্পে আধুনিকতা ও নতুন দিগন্তের সূচনা করেন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন তৎকালীন নর্দান কর্পোরেশনের পরিচালক ফারুক এম. হাসান।
তরুণ বয়সেই ফারুক এম. হাসান গার্মেন্টস শিল্পে নিজেকে নিযুক্ত করেন। এরপর ধাপে ধাপে তিনি শিল্পের প্রতিটি স্তরে অভিজ্ঞতা অর্জন করেন এবং গড়ে তোলেন জায়ান্ট টেক্সটাইলস লিমিটেডের মতো বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান। তাঁর দক্ষ নেতৃত্ব, কর্মনিষ্ঠা ও দূরদর্শিতার ফলেই তিনি ২০২১-২০২৪ মেয়াদে বিজিএমইএ-এর সভাপতি নির্বাচিত হন।
এই দায়িত্বে থেকে তিনি সফলভাবে দেশের গার্মেন্টস শিল্পকে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় এগিয়ে নিয়ে যান। তাঁর মেয়াদে বাংলাদেশ ২৪৩টি LEED-সনদপ্রাপ্ত পরিবেশবান্ধব কারখানা নিয়ে বিশ্বে প্রথম স্থানে উঠে আসে। শ্রমিক কল্যাণ, স্বাস্থ্যসেবা, নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডিংয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে অসাধারণ অগ্রগতি সাধিত হয়।

বর্তমানে ফারুক এম. হাসান সম্মিলিত পরিষদের প্রধান নির্বাচন সমন্বয়কারী হিসেবে ২০২৫-২০২৭ মেয়াদের জন্য নির্বাচনী প্রচারণায় নিয়োজিত। তাঁর নেতৃত্বে গঠিত প্যানেলটি দ্বিতীয় প্রজন্মের অভিজ্ঞ, সৃজনশীল ও প্রমাণিত উদ্যোক্তাদের সমন্বয়ে গঠিত, যারা ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত।
তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন, বৈশ্বিক সংঘাত, মন্দা, ট্যারিফ চ্যালেঞ্জের মত চ্যালেঞ্জ পেরিয়ে বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পকে বিশ্বদরবারে আরও উন্নত ও প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে নিয়ে যাওয়া সম্ভব।

ফারুক এম. হাসান গার্মেন্টস শিল্পের জন্য ভবিষ্যত পরিকল্পনায় ৯টি কৌশলগত স্তম্ভ নির্ধারণ করেছেন:
- People: শ্রমিকদের কল্যাণ, ন্যায্য মজুরি, স্বাস্থ্যসেবা ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ
- Inclusion: নারীদের অংশগ্রহণ এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্তি
- Transparency: উৎপাদনে স্বচ্ছতা ও বৈশ্বিক মানদণ্ডের অনুসরণ
- Infrastructure: নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব কারখানা নির্মাণ
- Innovation: প্রযুক্তি ও ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি
- Circular Economy: পুনর্ব্যবহার ও বর্জ্য হ্রাস
- Global Connectivity: নতুন বাজারে প্রবেশ ও আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্ব
- Bangladesh Branding: “Made in Bangladesh” কে গুণগত মান, নৈতিকতা ও টেকসইতার প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠা
- Environmental Sustainability: পানি সংরক্ষণ, নবায়নযোগ্য শক্তি ও কার্বন নিঃসরণ হ্রাস
শুধু গার্মেন্টস শিল্পেই নয়, ফারুক এম. হাসান সামাজিক উন্নয়ন, ক্রীড়া এবং কূটনৈতিক পরিমণ্ডলেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছেন। তিনি বাংলাদেশের ভলিবল ফেডারেশনের সভাপতি, মানবিক সংগঠন MSS-এর প্রধান এবং গ্রিসের সম্মানসূচক কনসাল জেনারেল হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাশি তিনি BUFT-এর ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং আন্তর্জাতিক অ্যাপারেল ফেডারেশনের বোর্ড সদস্য।
চার দশকের শিল্পভিত্তিক অভিজ্ঞতা, আন্তর্জাতিক সংযোগ, স্বচ্ছ নেতৃত্ব ও আধুনিক দর্শনে বিশ্বাসী ফারুক এম. হাসান শুধু একজন উদ্যোক্তা নন—তিনি এক রোল মডেল। তার নেতৃত্বে বিজিএমইএ এবং সম্মিলিত পরিষদ ভবিষ্যতের পথচলায় আরও এগিয়ে যাবে, বাংলাদেশকে গার্মেন্টস শিল্পে বিশ্বমানচিত্রে স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত করবে—এই প্রত্যাশাই রাখছে শিল্প মহল।