পঞ্চগড় প্রতিনিধি :
প্রশাসনকে বৃদ্ধালুঙ্গি দেখিয়ে পঞ্চগড়-বাংলাবান্ধা মহাসড়কের দু’পাশে পাথর বালুর জমজমাট ব্যবসা। জনসাধারণের চলাচলে দুভোর্গ সহ বাড়ছে সড়ক দূর্ঘটনা।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায় পঞ্চগড়-বাংলাবান্ধা ব্যস্ততম ৬০ কিলোমিটার মহাসড়কের দু’পাশে একাধিক স্থানে বালু পাথরের অসংখ্য স্তুব করেছে ব্যবসায়ীরা। জগদল বাজারের পাশে চৈতন্যপাড়া, ঠুটাপাগরী, বোর্ডবাজার, মুক্তাঞ্চল, দশমাইল, ভজনপুর নিজবাড়ী, জেমকন খাম্বা লিমিটেড, বুড়াবুড়ি বাজার, দরগাসিং থেকে খয়খাটপাড়া, রণচন্ডি বিজিবি ক্যাম্প, ভাদ্রুবাড়ী, ইসলামপুর দগরবাড়ি নামকস্থানে সড়কের উপর বালু-পাথরের স্তুপ থেকে দিন-রাতে ট্রাক লোড-আনলোডিং করা হচ্ছে।
এছাড়া বুড়াবুড়ি বাজার, ভজনপুর বাজার ও তিরনইহাট-বাংলাবান্ধা দালাল অফিসের সামনে সড়কের দুপাশে লোড-আনলোডের ট্রাকের দীর্ঘ লাইন। সারিবদ্ধ সড়কের দুপাশে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাক দেখলে মনে হয় মহাসড়কটি যেনো ট্রাক স্ট্যান্ড পরিণত হয়েছে। সড়কের উপর বালু-পাথর লোড-আনলোডিং সহ দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের কারণে জনসাধারণ ও স্কুলগামী ছাত্র-ছাত্রীসহ ছোট যানবাহনের চলাচলে ভীষণ দূর্ভোগ পোহাতে হয়। সড়কের উপর বালু-পাথর লোড-আনলোডিং করায় ধুলোবালি বাতাসে উড়ে জনসারণের চোখে মুখে পড়ছে। ট্রাকের দীর্ঘ লাইন থাকায় ছোট যানবাহনগুলো চলাচলে নানামুখী সমস্যার পাশাপাশি ছোট বড় দূর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। কিন্তু এসব ব্যবসায়ীরা সড়ক বিভাগ ও হাইওয়ে পুলিশের কোন আইন-কানুন তোয়াক্কা করছে না। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি হয়ে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে।
বিগত ২০১৮ সালে পঞ্চগড়- বাংলাবান্ধা মহাসড়কের দশমাইল নামক স্থানে জমে থাকা একটি ট্রাকের কারণে মিনিবাসের সংগে পোলবাহী ট্রাকের মুখোমুখী সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলে প্রায় ১৪ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটে। এছাড়া ২০২৩ সালের শেষ দিকে বোর্ড বাজার, জগদল বাজার, মাগুরমারী, ভজনপুর করতোয়া ব্রিজের পূর্ব-উত্তর বাঁকে, শালবাহান রোড, সিপাইপাড়া ও রণচন্ডি বাজার নামকস্থানে ট্রাক ও মোটরসাইকেল দূর্ঘটনায় বেশ ক’জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। ২০২৪ সালেও এসব স্থানে একাধিক সড়ক দূর্ঘটনা ঘটেছে।
চলতি বছরে বিগত পাঁচ মাসে একাধিক সড়ক দূর্ঘটনায় কয়েকজনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে এবং অনেকে পঙ্গুত্ববরণ করেছে। এরপরও প্রশাসনের চোখে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পাথর-বালু ব্যবসায়ী সড়কের দু’ধারে অবৈধভাবে ট্রাক লোড-আনলোডিং সহ বালু-পাথরের ব্যবসা করছে।
এ বিষয়ে পঞ্চগড় জেলা পাথর বালি ব্যবসায়ী ও সরবরাহ সমিতি’র সভাপতি মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, বালু-পাথরের ব্যবসা সড়ক কেন্দ্রিক। তবে জনসাধারণের চলাচলে অসুবিধা করে নয়। মহাসড়কের দু’পাশে পাথর-বালুর স্তুব এবং ট্রাক লোড-আনলোডিং না করার জন্য সমিতির পক্ষ থেকে মাইকিং করে নিষেধ করা হয়েছে। এখনো কিছু ব্যবসায়ী ব্যবসা করছে তাদের দায়িত্ব আমরা নিব না।

তেঁতুলিয়া হাইওয়ে থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত এসআই সোলেমান বলেন, পাথর-বালু ব্যবসায়ীরা রাতের আধারে সড়কের ধারে পাথর ফেলে স্তুপ করছে। হাইওয়ে পুলিশ টহলে থাকাবস্থায় ব্যবসায়ীদের সড়কের উপর থেকে পাথর-বালু সরায়ে নেওয়ার জন্য বলা হচ্ছে। কিন্তু কোনভাবেই বিষয়টি প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না।
এ ব্যাপারে পঞ্চগড় সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সুলতান মাহমুদ বলেন, পঞ্চগড়-বাংলাবান্ধা মহাসড়কের দুপাশে পাথর-বালু ব্যবসায়ীদের অপসারণের জন্য নোটিশ দেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে জরিমানা করা হয়েছে। কিন্তু সাময়িকভাবে বন্ধ হলেও পুনরায় শুরু করছে। এখন নোটিশ দিলেও মানছে না। ফলে সচেতন মহল এবং জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে সড়কের ধারে অবৈধ পাথর-বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা হবে।