দিনাজপুর প্রতিনিধিঃ
দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার দশমাইল মহাসড়কের পাশে গড়ে ওঠা একটি অস্থায়ী কলার পাইকারি হাট উত্তরবঙ্গের কৃষি অর্থনীতিতে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। প্রতিদিন ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ভ্যান, পিকআপ আর ট্রাকে ভরে আসা কলা এই হাটে কোটি টাকার ব্যবসা নিশ্চিত করছে। শুধু কৃষক বা পাইকার নয়, শত শত শ্রমিকের কর্মসংস্থান তৈরি করে এই হাট এখন এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
কলা চাষিরা এখানে তাদের ফসলের ন্যায্য দাম পাচ্ছেন। নয়াবাদ গ্রামের শাহীন আলম ৪৮ শতক জমিতে কলা চাষ করে একশ কাঁদি কলা ৬২ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন, যা তার জন্য বেশ লাভজনক। আরেক চাষি মোঃ আঃ মজিদ জানান, তার সাড়ে ৩ বিঘা জমির কলা বিক্রি করে ৩ লাখ টাকার বেশি আয় হবে বলে তিনি আশা করছেন। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, ফলন ভালো হওয়ায় এবং বাজারে চাহিদা থাকায় কৃষকরা এখন কলা চাষে অনেক বেশি আগ্রহী হচ্ছেন।
এই হাটের কারণে স্থানীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। প্রতিদিন শত শত শ্রমিক কলা লোডিং-আনলোডিংয়ের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। শ্রমিক হাসান আলী এবং হাফিজ আলম জানান, তারা দিনে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারেন। এতে তাদের পরিবারের খরচ মেটানো সহজ হচ্ছে। হাটের ইজারাদার এরশাদুল ইসলাম জানান, এখানে মৌসুমে অন্তত ১০০ শ্রমিক কাজ করেন, যা বেকারত্ব কমাতে সাহায্য করছে।
স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি এই হাট থেকে কলা যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। ঢাকা, ফেনীসহ দেশের নানা প্রান্ত থেকে পাইকাররা আসছেন। পাইকার আযীম উদ্দীন বলেন, তিনি প্রতিদিন তিন ট্রাক কলা কিনে ঢাকায় পাঠান, এবং চাহিদা বেশি থাকায় তার ব্যবসা ভালোই চলছে। আরেক পাইকার সামসুল ইসলাম জানান, সরবরাহ বাড়ার কারণে দাম কিছুটা কমেছে, তবে কৃষকরা এখনো ভালো লাভ করছেন।
কৃষি কর্মকর্তারা এই হাটের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। দিনাজপুর আঞ্চলিক কৃষি অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক জাহিদুর রহমান বলেন, কাহারোলসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার মাটি কলা চাষের জন্য খুব উপযোগী। তিনি জানান, স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এখানকার কলা এখন সারা দেশে সরবরাহ হচ্ছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নুরুজ্জামান মিয়া জানান, কৃষকদের উন্নত জাতের কলা চাষে উৎসাহিত করা হচ্ছে, যা তাদের আরও বেশি লাভবান হতে সাহায্য করছে।
গত দুই মাস ধরে চলা এই হাট আগামী এক মাস পর্যন্ত চলবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই সময়ের মধ্যে এটি উত্তরবঙ্গের কৃষি অর্থনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।