December 1, 2025

শিরোনাম
  • Home
  • অন্যান্য খবর
  • ঢাকায় তুরস্ক দূতাবাসে উৎসবমুখর পরিবেশে পালিত হলো তুরস্ক প্রজাতন্ত্রের ১০২তম জাতীয় দিবস

ঢাকায় তুরস্ক দূতাবাসে উৎসবমুখর পরিবেশে পালিত হলো তুরস্ক প্রজাতন্ত্রের ১০২তম জাতীয় দিবস

Image

বাংলাদেশে তুরস্ক প্রজাতন্ত্রের দূতাবাস বুধবার (২৯ অক্টোবর, ২০২৫) উদযাপন করেছে তুরস্ক প্রজাতন্ত্রের ১০২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। রাজধানীর শেরাটন হোটেলে আয়োজিত এই জাতীয় দিবস সংবর্ধনা অনুষ্ঠানটি ছিল আনন্দঘন ও উৎসবমুখর পরিবেশে পরিপূর্ণ। বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, ব্যবসায়ী, গণ্যমান্য ব্যক্তি এবং সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির প্রতিনিধি এতে অংশ নেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফওজুল কবির খান। তুরস্কের রাষ্ট্রদূত রামিস সেন ও তাঁর সহধর্মিণী জুহাল সেন অতিথিদের স্বাগত জানান। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকায় কর্মরত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, সিনিয়র কর্মকর্তা ও বাংলাদেশে কার্যরত তুর্কি কোম্পানির প্রতিনিধিরা।

এ বছর তুরস্ক প্রজাতন্ত্রের শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে জাতির পিতা গাজি মুস্তাফা কামাল আতাতুর্ক ও স্বাধীনতা সংগ্রামের বীর শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। রাষ্ট্রদূত রামিস শেন তাঁর বক্তব্যে বলেন, “আমরা আমাদের প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা ও স্বাধীনতার সংগ্রামে জীবন উৎসর্গকারীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। তুরস্ক ও বাংলাদেশ গভীর ও ঐতিহাসিক সম্পর্কের বন্ধনে আবদ্ধ, যা সময়ের সঙ্গে আরও সুদৃঢ় হচ্ছে।”

রাষ্ট্রদূত তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যকার সাম্প্রতিক উচ্চপর্যায়ের বৈঠক ও সফরের কথা তুলে ধরে বলেন, উভয় দেশ বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা ও বিনিয়োগ খাতে একসঙ্গে কাজ করছে। তিনি বাংলাদেশে কার্যরত তুর্কি বিনিয়োগকারীদের প্রশংসা করেন এবং ঢাকা-ইস্তাম্বুল সরাসরি ফ্লাইটকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারে “গুরুত্বপূর্ণ সেতুবন্ধন” হিসেবে উল্লেখ করেন।

রাষ্ট্রদূত দীর্ঘ ৪১ বছর ধরে দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য মি. সারাতি কাসিমান, তুরস্কের সাবেক সম্মানিত কনসাল জেনারেল, ও তাঁর পরিবারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। অনুষ্ঠানে তিনি তুরস্ক প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্টের বার্তাও পাঠ করেন, যেখানে শতবর্ষের গৌরব, উন্নয়ন, এবং বৈশ্বিক শান্তি ও ন্যায়ের পক্ষে তুরস্কের অঙ্গীকার তুলে ধরা হয়।

প্রধান অতিথি মুহাম্মদ ফওজুল কাবির খান তাঁর বক্তব্যে তুরস্কের জনগণ ও সরকারের প্রতি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান। তিনি বলেন, “অটোমান সাম্রাজ্যের ঐতিহ্য থেকে আধুনিক সংস্কারের যুগ পর্যন্ত তুরস্কের যাত্রা বিশ্বজুড়ে অনুপ্রেরণার উৎস।” তিনি ২০২৪ সালে দুই দেশের মধ্যে ১.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাণিজ্য অর্জনের বিষয়টি উল্লেখ করে ভবিষ্যতে এই সম্পর্ক আরও সম্প্রসারণের আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ–তুরস্ক যৌথ প্রশাসনিক মেকানিজম পুনর্নবীকরণের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে বিনিয়োগ ও বাণিজ্যিক সহযোগিতা নতুন দিগন্তে পৌঁছেছে। এছাড়া জ্বালানি, প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য, অবকাঠামোসহ বিভিন্ন খাতে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ছে।

তিনি তুরস্ক সরকারের মানবিক সহযোগিতারও প্রশংসা করেন—বিশেষ করে তুর্কি উন্নয়ন ও ত্রাণ সংস্থা (TİKA)-এর মাধ্যমে রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের বিষয়টি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “আমরা রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে তুরস্কের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করছি।”

অনুষ্ঠান শেষে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা ও নৈশভোজের মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে তুরস্কের বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার এই উদযাপন শেষ হয়। দুই দেশের নেতৃবৃন্দের দূরদৃষ্টি ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতে গড়ে ওঠা এই সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরও অগ্রগতির প্রতীক হয়ে থাকবে।

Scroll to Top