আলজেরিয়ান মুসলিম স্কাউটস-এর জাতীয় দিবস উপলক্ষে ঢাকায় মঙ্গলবার (২৭ মে, ২০২৫) এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। আলজেরিয়ান দূতাবাসের উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট অতিথিবৃন্দ, কূটনীতিক, ধর্মীয় নেতা, গণমাধ্যমকর্মী, দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং স্কাউট সদস্যরা।
অনুষ্ঠানের শুরুতে আলজেরিয়ার জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয় স্যালুট জানানোর মাধ্যমে শ্রদ্ধা জানানো হয়।


অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত আলজেরিয়ার রাষ্ট্রদূত আবদেলৌহাব সাইদানি বলেন, “আজকের এই তাৎপর্যপূর্ণ দিনে আমরা এক মহান আত্মত্যাগ ও ঐতিহ্যকে স্মরণ করছি—যেটি আলজেরিয়ার জাতীয় ইতিহাসে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত। ২০২১ সালের ২৮ এপ্রিল প্রেসিডেনশিয়াল ডিক্রির মাধ্যমে ২৭ মে তারিখটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘আলজেরিয়ান মুসলিম স্কাউটস দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়, শহীদ মোহাম্মদ বোরাসের আত্মত্যাগের স্মরণে।”




তিনি বলেন, “স্কাউট আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল ১৯০৭ সালে ব্রিটিশ সেনা কর্মকর্তা রবার্ট ব্যাডেন-পাওয়েলের মাধ্যমে। এটি তরুণদের দক্ষতা, দায়িত্ববোধ ও সমাজসেবায় উদ্বুদ্ধ করার এক বিশ্বজনীন প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়। কিন্তু আলজেরিয়ায় এটি ছিল আরও গভীর অর্থবাহী—এটি হয়ে উঠেছিল স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রস্তুতি মঞ্চ।”
রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, “১৯৩৫ সালে ‘আল-ফালাহ’ নামে যাত্রা শুরু করে এবং ১৯৩৯ সালে ‘আলজেরিয়ান মুসলিম স্কাউটস’-এ রূপান্তরিত হওয়া সংগঠনটি মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতিতে অনন্য ভূমিকা রেখেছে। মোহাম্মদ বোরাস ইসলামি মূল্যবোধ, দেশপ্রেম, শৃঙ্খলা ও সংহতির শিক্ষা দিয়ে আলজেরিয়ার তরুণদের গড়ে তুলেছিলেন। তাঁর আত্মত্যাগ ১৯৪১ সালে, ফরাসি ঔপনিবেশিক শক্তির হাতে, আজও আমাদের প্রেরণার উৎস।”


তিনি উল্লেখ করেন, আলজেরিয়ার বহু জাতীয় বীর—যেমন লারবি বেন ম’হিদি, আহমেদ জাবানা, দিদুচ মুরাদ, জিঘুদ ইউসেফ, মোহাম্মদ বুখরিস ও দেবীহ চেরিফ—এই স্কাউট আন্দোলনের মধ্য দিয়েই গড়ে উঠেছিলেন।
আধুনিক আলজেরিয়াতেও এই আন্দোলনের প্রভাব সুস্পষ্ট। ২০২১ সালের তথ্য অনুযায়ী, স্কাউট সদস্য সংখ্যা ৭৭ হাজারেরও বেশি, যারা স্কুল নির্মাণ, রাস্তা উন্নয়ন, সাক্ষরতা অভিযানসহ বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্পে অংশ নিচ্ছেন। ‘চেঞ্জ মেকারস প্রজেক্ট’-এর মাধ্যমে ৮০ হাজারের বেশি স্কাউট যুব নেতৃত্ব, উদ্যোক্তা উন্নয়ন ও সামাজিক পরিবর্তনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন।
রাষ্ট্রদূত সাইদানি তাঁর বক্তব্যের শেষে বলেন, “এই দিনটি কেবল শহীদ মোহাম্মদ বোরাসের আত্মত্যাগ স্মরণ নয়—এটি আমাদের তরুণদের সাহস, নেতৃত্ব ও সেবার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করার এক মহান উপলক্ষ। আমাদের কর্তব্য, আমরা যেন এই আদর্শ ও চেতনাকে ধরে রাখি এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে দেশপ্রেম ও দায়িত্ববোধে গড়ে তুলি।”
অনুষ্ঠানটি শেষ হয় সম্মিলিত প্রার্থনা ও স্কাউট সদস্যদের পরিবেশিত সাংস্কৃতিক উপস্থাপনার মধ্য দিয়ে।