যশোর প্রতিনিধিঃ
যশোরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সাম্প্রতিক টানা ভারি বৃষ্টিপাতে অধিকাংশ নিচু জমির আমন ধানের বীজতলা তলিয়ে গেছে । এতে করে আমন মৌসুমের চাষের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ চারা উৎপাদনে মারাত্মক সংকট দেখা দিয়েছে। কৃষকরা বলছে, সঠিক সময়ে চারা পাওয়া না গেলে, আমন মৌসুমে ধান চাষ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কঠিন হয়ে পড়বে।
বর্তমান চলছে রোপা আমন ধান রোপনের ভরা মওসুম চুড়ামনকাটি, কাশিমপুর, হৈবতপুর, দেয়াড়াসহ অঞ্চলের সকল ইউনিয়নের মাঠের পর মাঠ কৃষক চরম ব্যস্ত সময় পার করছে আমন ধান রোপনের জন্য। ট্রাক্টর বা লাঙল দিয়ে জমি তৈরি, আগাছা পরিস্কার, সার বোনা, জমির আইল কেটে ধান লাগাবার উপযোগি করাসহ সকল প্রস্তুতি শেষ করেছেন। এ ধরনের নানা কাজে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খেয়ে না খেয়ে ক্ষেতে সময় পার করছে তারা। তবে ধান রোপনের শুরুতে এ ধরনের ধানের চারার সংকটে পড়েছেন কৃষকরা।
কৃষক আব্দুল মালেক জানান, অতি ভারী বৃষ্টিতে আমন ধানের বীজতলা পানির নিচে তলিয়ে থাকার কারনে অধিবাংশ চারা পচে গেছে। ফলে যতটুকু জমিতে ধান চাষ করবো সে পরিমান চারা আমার উৎপন্ন হবে না। যদি নষ্ট না হতো তাহলে অনেক চারা বিক্রি করা যেতো। এখন আমাকে চারা কিনে ধান রোপন করতে হবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় কোথাও চারার সন্ধ্যান পায়নি।
মাওলানা ওলিয়ার রহমানের ১৫ কেজি ধানের বীজতলার পুরোটা নষ্ট হয়ে গেছে বৃষ্টিতে তলিয়ে। তার দেড়বিঘা জমি এখনো পানির নিচে। যে জমিতে ধান লাগানো সম্ভব না। তিনি বহু জায়গায় অনেক খোজাখুজির পরেও বাকি জমিতে ধান লাগাবার জন্য চারা পাননি।
অধিকাংশ কৃষকের মতে বীজতলা পানিতে ডুবে অর্ধেক বা পুরোটা নষ্ট হয়ে গেছে । বিল, খাল বা নিচু এলাকাতে যে সকল কৃষক বীজতলা তৈরি করেছিলো তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেশি।
যশোরের বিখ্যাত এড়লের বিল, বদধানার বিল, ছোট বিল বিখ্যাত হরিণার বিলসহ ডোবা নালাতে এবার আমন রোপণ সম্ভব হবে না বলে অধিকাংশ কৃষকের অভিমত ।
কৃষি সংশ্লিষ্টরা বলছে, স্থানীয় কৃষি অফিসকে এলাকার রোপা আমন বীজতলার ক্ষতির পরিমান নির্ধারণ করে দ্রুততম সময়ে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করে কৃষদের এ সংকট থেকে উত্তরণের ব্যবস্থা করতে হবে ।
কৃষি বিশেষজ্ঞরা আরো বলছেন, আমন চাষের জন্য উপযুক্ত সময় আগস্টের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত। এর মধ্যে যদি কৃষকরা চারার ব্যবস্থা করতে না পারেন, তাহলে তাদের পুরো মৌসুমটাই ক্ষতির মুখে পড়তে হবে ।
অনেক কৃষক বিভিন্ন জায়গা থেকে চারা সংগ্রহের চেষ্টা করছেন, যার ফলে চারার দামও বাড়তি। আবার অনেক কৃষক ঝুকি নিয়ে নতুন বীজতলা তৈরির কথা ভাবছে। অনেকে তৈরি করে বীজ ফেলেছে। তারা বলছে এ চারা হয়ে গেলে রোপা আমন একটু দেরিতে বা নাবিতে উঠবে।
এ অবস্থায় দ্রুত সরকারি সহায়তা ও বিকল্প বীজতলা গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। নাহলে আমন মৌসুমে কৃষকের ক্ষতির পরিমাণ অনেক বড় হতে পারে। সাথে রোপা আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না।
ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন দেশের কৃষকরা। এই সংকট কেবল কৃষকের ব্যক্তিগত ক্ষতি নয়, বরং দেশের খাদ্য নিরাপত্তার জন্যও হুমকি। তাই এখনই প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ ও কৃষকদের পাশে দাঁড়ানো।