December 1, 2025

শিরোনাম
  • Home
  • রাজনীতি
  • জাতীয় ঐক্যই আমাদের শক্তি, বিভাজন আমাদের দুর্বলতা: জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসে তারেক রহমান

জাতীয় ঐক্যই আমাদের শক্তি, বিভাজন আমাদের দুর্বলতা: জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসে তারেক রহমান

Image

‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে আজ বুধবার (১২ নভেম্বর ২০২৫) সন্ধ্যায় আগারগাঁওয়ের বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে বিএনপি আয়োজিত আলোচনা সভায় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যুক্তরাজ্য থেকে ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।

বক্তব্যের শুরুতেই তিনি শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর ছিল “বাংলাদেশের শত্রু ও মিত্র চিহ্নিত করার দিন।” তিনি বলেন, “যারা দেশকে তাঁবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করতে চেয়েছিল, যারা জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিয়েছিল— সিপাহী-জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লবের মাধ্যমে ৭ নভেম্বর তারা পরাজিত হয়।”

তারেক রহমান বলেন, “১৯৭১ ছিল স্বাধীনতা অর্জনের যুদ্ধ, আর ২০২৪ ছিল স্বাধীনতা রক্ষার সংগ্রাম।” তিনি আহ্বান জানান, ভবিষ্যতে যেন আর কেউ জনগণের অধিকার হরণ করতে না পারে, সে জন্য ৭ নভেম্বরের চেতনায় জাতীয় ঐক্য সুসংহত করতে হবে।

বিএনপি নেতা বলেন, “জাতীয় ঐক্য রক্ষায় আমাদের মনে রাখতে হবে— ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ, ৭৫-এর সিপাহী-জনতার বিপ্লব, ৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন কিংবা ২০২৪ সালের ফ্যাসিবাদবিরোধী গণঅভ্যুত্থান— প্রতিটি আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা।”

তিনি অভিযোগ করে বলেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে মাসের পর মাস ধরে নানা রাজনৈতিক আলোচনা হলেও কৃষি, শিক্ষা, কর্মসংস্থান, নারী নিরাপত্তা কিংবা সড়ক নিরাপত্তার মতো জনগণের জীবনঘনিষ্ঠ বিষয়গুলো আলোচনায় স্থান পায়নি।”

তারেক রহমান বলেন, “দেশে এক বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় ৭ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে, যার প্রায় অর্ধেকই নারী ও শিশু। অথচ সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে কোনো কার্যকর আলোচনা হয়নি।”

কৃষি খাতের সংকট তুলে ধরে তিনি বলেন, “এবার ১ কোটি ১৫ লাখ টন আলু উৎপাদন হয়েছে, কিন্তু হিমাগার খরচ ও বাজারমূল্যের ব্যবধানের কারণে কৃষকরা প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা লোকসানের আশঙ্কায় আছেন। অথচ রাষ্ট্র অকারণ গণভোটে প্রায় সমপরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে যাচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন, “পেঁয়াজ সংরক্ষণাগার স্থাপন বা কৃষকদের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা জনগণের কাছে ‘গণভোটের’ চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।”

নারী কর্মসংস্থান প্রসঙ্গে তারেক রহমান উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “দেশে ২ কোটির বেশি কর্মজীবী নারী রয়েছেন। কর্মঘণ্টা কমানোর প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে নারী কর্মসংস্থানে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।”

বেকারত্বের প্রসঙ্গে তিনি জানান, “দেশে দারিদ্র্যের হার ২৮ শতাংশে পৌঁছেছে, এবং উচ্চশিক্ষিত প্রতি ৫ জনের ১ জন বেকার। গত ১৪ মাসে ৩৫৩টি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে এক লাখেরও বেশি শ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন।”

শিক্ষা ব্যবস্থার অবনতি নিয়েও তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “২০২৫ সালের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় দেশের ২০২টি প্রতিষ্ঠানের একজনও শিক্ষার্থী পাস করতে পারেনি। ইংরেজি ও আইসিটিতে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছে। শিক্ষা সংস্কারের বদলে কথিত ‘গণভোট’ নিয়ে গবেষণা হচ্ছে— যা দুঃখজনক।”

অর্থনীতির বিষয়ে তিনি বলেন, “দেশের ব্যাংকিং খাতে অন্তত ২৪টি ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৪ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে, যা ২০০৬ সালের বিএনপি সরকারের সময়কার ৭.৬ শতাংশের তুলনায় অনেক কম।”

তিনি সতর্ক করে বলেন, “যারা নির্বাচন ঠেকাতে নানা শর্ত দিচ্ছে, তারা গণতন্ত্রকামী জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার পথে বাধা দিচ্ছে। কোনো দল যদি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে দুর্বল ভেবে অপকৌশল নেয়, সেটি শেষ পর্যন্ত তাদের জন্যই রাজনৈতিক বিপর্যয়ের কারণ হবে।”

তারেক রহমান বলেন, “দেশের গণতন্ত্র ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বিএনপি সর্বোচ্চ ছাড় দিয়েছে। জুলাই সনদে যা অঙ্গীকার করা হয়েছে, বিএনপি তা রক্ষা করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।”

বক্তব্যের শেষাংশে তিনি স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের একটি উক্তি স্মরণ করিয়ে বলেন,

“জাতীয় ঐক্য আমাদের শক্তি, বিভাজন আমাদের দুর্বলতা।”

Scroll to Top