অনলাইন ডেস্কঃ
অপশক্তির যেকোনো ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে জনগণের প্রত্যাশা পূরণে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
শুক্রবার (৮ নভেম্বর, ২০২৪) নয়াপল্টনে এক বিশাল সমাবেশে তারেক রহমান এই আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘আমি স্বাধীনতাকামী মানুষকে একটি বিষয়ে সতর্ক করতে চাই, আমি নিজেও সজাগ থাকতে চাই যে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রবিরোধী অপশক্তির ষড়যন্ত্র এখনো বন্ধ হয়নি ‘
বিএনপির এই নেতা বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারকে দুর্বল করতে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সহযোগীরা এখনও দেশের প্রশাসনে, বিভিন্ন পদে এবং বিদেশেও সক্রিয় রয়েছেন।
তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি তার দলের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, এই প্রশাসনকে কখনও ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না।
তারেক বলেন, ‘তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যদি নিজেদের সতর্ক রাখতে চায়, তাহলে জনগণের প্রত্যাশা পূরণে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এটা এখন জনগণের দাবি।’
তিনি একটি সফল গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদের অবসান ঘটানোয় দেশের জনগণ ও ছাত্রদের অভিনন্দন জানান।
তারেক রহমান বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর ছিল বাংলাদেশের বন্ধু ও শত্রুর মধ্যে পার্থক্য করার দিন, আর ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছিল বাংলাদেশের শত্রু চিহ্নিত করার দিন।’
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের পক্ষের শক্তি যতদিন ঐক্যবদ্ধ থাকবে ততদিন দেশের স্বাধীনতাকে কেউ খর্ব করতে পারবে না।
বিএনপির এই নেতা বলেন, তাদের এই সমাবেশের লক্ষ্য কারও বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় তোলা নয়, বরং দেশের স্বার্থ রক্ষা, ভোট ও জনগণের অন্যান্য অধিকার রক্ষার মিছিল।
তিনি আরও বলেন, ‘রাজপথে লাখো মানুষের এই মিছিল অগণিত ছাত্র-নাগরিক ও শহীদ এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে আহত মানুষের স্বপ্নের গণতান্ত্রিক ও মানবিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রত্যয়ের মিছিল।’
তারেক জোর দিয়ে বলেন, বাংলাদেশে যেন আর কখনো ফ্যাসিবাদ ফিরে না আসে তা নিশ্চিত করতে প্রত্যেক নাগরিকের ভোটের মাধ্যমে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, ‘স্থানীয় সরকার থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় সরকার পর্যন্ত যারা প্রতিনিধি হতে চায় তারা যতদিন জনগণের ভোটের ওপর নির্ভরশীল থাকবে না, ততদিন জনগণ গণতন্ত্রের সুফল পুরোপুরি ভোগ করতে পারবে না।’
তারেক বলেন, যদি তাদের(জনগণের) সরাসরি ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচনের অধিকার নিশ্চিত না করা যায়, তাহলে স্বৈরাচার বা ফ্যাসিবাদমুক্ত পরিবেশেও নিম্ন আয়ের মানুষকে বাজার সিন্ডিকেটের অভিশাপ থেকে মুক্ত করা সম্ভব হবে না।
তিনি বলেন, ‘আসুন আমরা নিশ্চিত করি যে এই বিশাল মিছিল বৃথা যাবে না। এই প্রত্যাশা নিয়েই আমি এই সমাবেশের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করছি।’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল আলমগীর বলেন, অভ্যুত্থানের সময় শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলেও তার দোসররা এখনো সর্বত্র লুকিয়ে আছে, নানাভাবে বাংলাদেশের ক্ষতি করতে প্রস্তুত।
তিনি বলেন, জাতীয় ঐক্য জোরদার করে বাংলাদেশকে ধ্বংস করার ঘৃণ্য অপচেষ্টা প্রতিহত করতে হবে। ‘কোনো স্বৈরশাসককে আর জনগণের অধিকার কেড়ে নিতে দেওয়া হবে না। আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ হই এবং নিশ্চিত করি যে, বাংলাদেশে শুধু গণতন্ত্রই বিরাজ করবে।’
পরে ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে রাজধানীতে বর্ণাঢ্য র্যালি বের করে দলটি।
বিকাল ৩টা ৩২ মিনিটে সমাবেশের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
এর আগে দুপুর থেকেই রঙিন টুপি পরে নয়াপল্টনে জড়ো হওয়া বিএনপি ও এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কয়েক হাজার নেতাকর্মী বড় ধরনের শোডাউনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নেন।
দলের শীর্ষ নেতাদের ছবি সম্বলিত ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড নিয়ে তারা নির্বাচন ও তারেক রহমানসহ দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে স্লোগান দেন।
কাকরাইল মসজিদ ও ফকিরাপুল ও আশপাশের এলাকা বিএনপির সমর্থকদের পদচারণায় কানায় কানায় পূর্ণ থাকায় ওই এলাকায় যান চলাচল বিঘ্নিত হয়।
এটি কাকরাইল মোড়, কাকরাইল মসজিদ, মৎস্য ভবন, ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট, শাহবাগ, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল, বাংলামোটর, কারওয়ান বাজার ও ফার্মগেট হয়ে মানিক মিয়া এভিনিউয়ে যাবে।
দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ভার্চুয়াল বক্তব্যের মাধ্যমে র্যালিটি সমাপ্ত হবে।
১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের ‘সিপাহী-জনতার অভ্যুত্থান’ স্মরণে বৃহস্পতিবার ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ পালন করে বিএনপি।
১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে সৈনিক ও বেসামরিক জনগণ যৌথভাবে তৎকালীন সেনাবাহিনী প্রধান জিয়াউর রহমানকে ঢাকা সেনানিবাসের বন্দিদশা থেকে মুক্ত করে। এর মাধ্যমে তার ক্ষমতায় আরোহণের পথ প্রশস্ত হয়।
সূত্রঃ ইউএনবি।