বাংলাদেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতারা সরকারের কাছে ২০২৬ সালে নির্ধারিত এলডিসি (স্বল্পোন্নত দেশ) থেকে উত্তরণের সময়সীমা পিছিয়ে ২০৩২ সাল পর্যন্ত বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন। পাশাপাশি, টেকসই ও মসৃণ উত্তরণের জন্য অতিরিক্ত তিন বছরের একটি ট্রানজিশন পিরিয়ড রাখার আহ্বান জানান তারা।
রোববার (২৪ আগস্ট ২০২৫) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে “এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন: চ্যালেঞ্জেস অ্যাহেড” শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে আয়োজন করে ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশ (আইসিসিবি) এবং জাতীয় পর্যায়ের ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো, যার মধ্যে রয়েছে এফবিসিসিআই।
আইসিসিবি’র সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ আগামী নভেম্বর ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে উত্তরণের কথা রয়েছে। আমাদের উদ্যোক্তারা এ উত্তরণকে স্বাগত জানালেও তারা মনে করেন পূর্ণ প্রস্তুতির জন্য অন্তত ২০৩২ সাল পর্যন্ত সময় প্রয়োজন। ব্যবসায়ী নেতারা যুক্তি দেন, অতিরিক্ত ৩ থেকে ৫ বছরের প্রস্তুতির মাধ্যমে বাংলাদেশ ইইউ, যুক্তরাজ্য, আসিয়ান ও উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট (এফটিএ) নিশ্চিত করতে পারবে। এর পাশাপাশি ওষুধ, তথ্যপ্রযুক্তি, চামড়া, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ ও লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং খাতে রপ্তানি বৈচিত্র্য আনা, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের (অটোমেশন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) জন্য দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি, উন্নত প্রযুক্তি ও মানসম্মত বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ এবং শাসনব্যবস্থা, জলবায়ু সহনশীলতা ও বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা জোরদার করা সম্ভব হবে।
এক লিখিত বিবৃতিতে ব্যবসায়ীরা সতর্ক করেন, প্রস্তুতি ছাড়াই আগাম গ্র্যাজুয়েশন হলে নানা ঝুঁকি তৈরি হবে। এর মধ্যে রয়েছে ডিউটি-ফ্রি সুবিধা হারানো, যার ফলে ইইউ ও যুক্তরাজ্যে ১২ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ হতে পারে এবং এতে রপ্তানি ৬–১৪ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। একই সঙ্গে রপ্তানি ভর্তুকি ও নমনীয় মেধাস্বত্ব আইন আর থাকবে না। বিশেষ করে ওষুধ শিল্পকে কঠোর পেটেন্ট আইন মেনে চলতে হবে, ফলে উৎপাদন ব্যয় ও ওষুধের দাম বাড়বে। এ ছাড়া কঠোর রুলস অব অরিজিনের কারণে তৈরি পোশাক (আরএমজি) খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পাশাপাশি কনসেশনাল ঋণ পাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে, ফলে উচ্চ সুদে বাজারভিত্তিক ঋণের ওপর নির্ভর করতে হবে এবং বিশ্বব্যাংকের আইডিএর নমনীয় ঋণ সুবিধাও হারাবে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড হিসেবে রপ্তানির ৮১ শতাংশেরও বেশি অবদান রাখা তৈরি পোশাক খাতের ওপর এসব প্রভাব পড়বে সবচেয়ে বেশি। শুল্কমুক্ত সুবিধা হারানো ও কঠোর মানদণ্ডের কারণে উৎপাদন খরচ বাড়বে, প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমবে। তাই ব্যবসায়ী নেতারা রপ্তানি বহুমুখীকরণের ওপর জোর দেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আইসিসিবি’র সহ-সভাপতি এ.কে. আজাদ, এমসিসিআই সভাপতি কামরান টি. রহমান, ডিসিসিআই সিনিয়র সহ-সভাপতি রাজিব এইচ. চৌধুরী, বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান, বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম এবং বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ প্রমুখ।