অর্থনীতিবীদ, দেশের ও বিদেশের বিভিন্ন চিন্তাবিদ ও কিছু দৈনিক পত্রিকার সংবাদ এর তথ্য মতে বাংলাদেশের অর্থনীতি টিকে আছে প্রবাসী আয় উপর এবং এরপর গার্মেন্টস শিল্পের অবস্থান। ২০২২ সালে বাংলাদেশ ৪৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পোশাক রপ্তানি করেছে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ বিশ্ববাজারে পোশাক রপ্তানির অংশ তিনগুণ বাড়িয়েছে, যা ২০০৫ সালে মাত্র ২.৫% থেকে ২০২২ সালে ৭.৯%-এ পৌঁছেছে। অপর দিকে গত পাঁচ বছরে গার্মেন্টস শিল্পের রপ্তানি ছিল প্রায় ২০০ বিলিয়ন ডলার যার রপ্তানি আয় ১৫ % থেকে ২০%। আমদানি বিল ও বিদেশী চাকরিরতদের বেতন ভাতা বাদে গত ৫ বছরে বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প ও প্রবাসী আয় ছিল যথাক্রমেঃ গার্মেন্টস শিল্পের থেকে উদ্ভূত রপ্তানি আয় ৪০ বিলিয়ন ডলার এবং প্রবাসী আয় ১০৫ বিলিয়ন ডলারের সর্বমোট ১৪৫ বিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংক এর দেয়া তথ্যমতে, বর্তমানে দেশে বিদেশি বিনিয়োগ কমে গেছে। বিশেষ করে নতুন বিনিয়োগ (ইক্যুইটি) তিন বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে কমছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এর রিপোর্ট ২০২৩ সালের প্রকৃত বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) তথ্য প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা গেছে, গত বছর প্রকৃত এফডিআই কমেছে প্রায় ১৪ শতাংশ, আর একই সময়ে নতুন বিনিয়োগ কমেছে ৩১ শতাংশ। এ ঘাটতি সহজেই পূরণ করতে পাড়ে আমাদের প্রবাসী বাংলাদেশীরা।
বাংলাদেশের রিজার্ভ গার্মেন্টস শিল্পের চাইতে প্রবাসী আয় এর উপর বেশি নির্ভরশীল কিন্তু অপর দিকে গার্মেন্ট শিল্পের সব চাইতে বেশি সফলতা হলো এক কথায় বলতে গেলে সকল শ্রেণীর মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি যা বাংলাদেশের অন্য কোনো সেক্টরে এমন অর্জন করতে পারে নাই বা বলতে গেলে সম্ভব ও না। এ খাত শুধু দেশের বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডারকেই সমৃদ্ধ করেনি, একই সঙ্গে নিশ্চিত করেছে প্রায় ৪৪ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান, যার মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশই নারী। এ ছাড়াও ব্যাকওয়ার্ড ও ফরওয়ার্ড শিল্প মিলিয়ে শিল্পটি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ১ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। বর্তমানে দেশের প্রায় ৫ কোটি লোক জীবন-জীবিকার জন্য এ শিল্পের ওপর কোনো না কোনোভাবে নির্ভরশীল। ২০২৩ সালের জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) হিসাবে, বাংলাদেশের ১ কোটি ৫৫ লাখ অভিবাসী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাস করছেন এবং কর্মরত রয়েছেন এবং গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল সেক্টরে প্রায় ৫ কোটি মানুষের অন্ন যোগায়।

গত ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত রেমিট্যান্স না গার্মেন্টস শিরোনাম এ “অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি কোনটি” মইনুল ইসলাম অর্থনীতিবিদ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক অনেক সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন। সেটি পড়লে এ বিষয়ে আর বিস্তারিত জানতে পারবেন।
আমার আলোচনার বিষয় হলো আমরা পোশাক খাতের পাশাপাশি দেশের অর্থনীতির আরেকটি খুটি হলো আমাদের রেমিট্যান্স যোদ্ধারা৷ আমাদের তৈরি পোশাক খাতে ও বহুমুখী পন্য রপ্তানিতে রেমিট্যান্স যোদ্ধাদেরও অবদান রাখার বিশাল সুযোগ রয়েছে। আমাদের তৈরি পোশাক খাতে ও বাংলাদেশের বহুমুখী পন্য রপ্তানিতে অবদান রাখতে পারেন প্রবাসী ভাইয়েরা৷
ইতিমধ্যেই আমাদের দেশের অনেক প্রবাসী বাংলাদেশীরা বিদেশে ব্যবসা বাণিজ্য করে বিশাল সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এখন প্রবাসী আয় উপর নজর এবং সেই টাকা যাতে তারা সে দেশেই বিনিয়োগ করতে সক্ষম হয় সে বিষয়ে বিভিন্ন সেক্টরে বিশেষ সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে ও দেশের সরকার।
বিভিন্ন দেশে রফতানি বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রপ্তানি নীতিমালা অনুযায়ী পণ্যের কোয়ালিটিতে যাতে কোনও ধরনের ছাড় দেওয়া না হয় তাও নিশ্চিত করতে বলেছেন। (১ জুলাই) মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে তিনি এই নির্দেশ দেন। এদিন রপ্তানি নীতি ২০২৪-২৭ এর খসড়ায় অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
আমি বিশ্বাস করি প্রবাসীদের মধ্যেও অনেক বড় একটা অংশ আছে যারা শিক্ষিত ও অর্ধশিক্ষিত উচ্চশিক্ষিত প্রবাসীরা যে যে দেশে আছে সেখানে বাংলাদেশের পণ্যের চাহিদা ও ভালো করার সুযোগ থাকলে সবথেকে ভালো বলতে পারবেন তারা। তারা যদি নিজ দায়িত্বে আমাদের দেশের বহুমুখী পন্য ও পোশাকের ব্রান্ডিং করে এবং ঐ দেশের মার্কেটে দেশের পোশাকশিল্প সহ অন্যান্য পন্য সেল করার জন্য কাজ করে তাহলে আমরা আমাদের নমিনেটেড বায়ারের পাশাপাশি তাদেরকেও বায়ার হিসেবে পাবো। এখন অনেকেই করছে কিন্তু এতে এখন একটা দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা করতে পারলে এতে করে দেশের বাহির আমাদের পোশাক বিক্রির আরো নতুন বাজার ক্ষেত্রে তৈরির পাশাপাশি চাহিদাও বৃদ্ধি পাবে। আমি যেহেতু তৈরি পোশাক শিল্পের সাথে জড়িত তাই একটির সম্ভাবনা নিয়ে কথা গুলো তুলে ধরলাম।
দেশের অর্থনীতির অন্যতম দুটি খুটি তৈরি পোশাক ও রেমিট্যান্স যোদ্ধারা এক হয়ে কাজ করলে দেশের পোশাক খাতে নতুন সূর্য উদিত হবে বলে আমার প্রত্যাশা। প্রবাসী বাংলাদেশী ছোট বড় ব্যবসায়ীরা তাদের সাধারণ কাজের পাশাপাশি আমাদের সাথে কাজ করলে তাদের আয়ের পাশাপাশি অতিরিক্ত আয়ের অনেক সম্ভাবনা তৈরী হবে কিন্তু এক্ষেত্রে তাদের হারানোর কিছু নেই, সর্বোপরি এই দেশের অর্থনীতির চাকা আরো বেশি সচল করে তুলবে। এবং আমি বিশ্বাস করি প্রবাসী ভাইয়েরা যদি উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখতে পারেন তবে আপনারাই আপনাদের উদ্যোম দিয়ে গড়ে তুলতে পারবেন স্বনির্ভর বাংলাদেশ। তবে এখানে আমাদের নীতি নির্ধারকদেরও ভূমিকা রাখতে হবে। যেমন BGMEA, BGBA, BKMEA, FBCCI কে প্রবাসীদের সাথে বসে তাদেরকে পোশাকখাতের আন্তর্জাতিক অ্যাম্বাসেডর হিসেবে কাজ করার সুযোগ করে দিতে হবে। আমি BGMEA, BGBA, BTMC, BKMEA এর প্রেসিডেন্ট মহোদয়দের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই আপনারা প্রবাসী বাংলাদেশি ভাইদের দিকে সুদৃষ্টি দিন, এইধরনের ভিন্নধর্মী চিন্তাধারা নিয়ে কাজ করার ফলে আমাদের সেক্টর বৈদেশিক অর্ডার পাওয়ার ক্ষেত্রে আরো এগিয়ে যেতে পারে এবং নতুন নতুন বাজার দখল করতে সহজ হবে ভবিষ্যতে সংগঠনের শাখা অফিস এবং আমাদের রপ্তানি পন্য উপস্থাপন করা সহজ হবে। পাশাপাশি পোশাকখাতের নীতিনির্ধারকদের এগিয়ে আসতে হবে। আমার ক্ষুদ্র জ্ঞান থেকে আমি সবার সামনে এই প্রপোজালে শেয়ার করলাম। আপনার বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত এর কাছে যাচ্ছেন আমার আন্তরিক অনুরোধ একটু আমাদের প্রবাসী বাংলাদেশী ভাইদের সময় দিয়ে দেখুন।
১০০ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এমন একটি পদক্ষেপ সহায়ক হবে বলে আমি মনে করি। অন্যদিকে প্রস্তাবিত ২০২৪-২৭ মেয়াদের রপ্তানি নীতি অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। যে রপ্তানি নীতিতে মেয়াদের শেষ বছরে ১১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত খাতে সম্ভাবনাময় নতুন কিছু পণ্য ও সেবা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও উদ্ভূত সুবিধা সদ্ব্যবহার করার লক্ষ্যে বিশ্ব বাণিজ্য চুক্তির আওতায় দেওয়া সুবিধা আদায়ে কর্মপরিকল্পনা তৈরি থেকে শুরু করে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ করতে সমন্বিত কার্যক্রম বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে রপ্তানি নীতিতে।
তাহলে সরকারও পজিটিভ মনোভাব পোষণ করে শুধু চাই ব্যবসায়ীদের এগিয়ে আসতে হবে।
সালাউদ্দিন
পরিচালক রিয়াজ গার্মেন্টস
হেড অফ অপারেশন