ঢাকা ডায়লগ-এর নির্বাহী সম্পাদক সজীবুল-আল-রাজীব আলজেরিয়ার মহিমান্বিত মুক্তিযুদ্ধের ৭১তম বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত বর্ণাঢ্য সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগদানের সুযোগ পাওয়ায় আলজেরিয়ার রাষ্ট্রদূত ড. আব্দেলওয়াহাব সাইদানি এবং তার সহধর্মিণী মিসেস মারিয়েম সাইদানি-এর প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি জানান, রাষ্ট্রদূতের সৌহার্দ্যপূর্ণ আতিথেয়তা এবং ভ্রাতৃত্বপূর্ণ পরিবেশে আয়োজিত এই অনুষ্ঠান দুই দেশের ঐতিহাসিক বন্ধনকে আরও দৃঢ় করে।

ঢাকার লে মেরিডিয়ান হোটেলে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে ১৯৫৪ সালের ১ নভেম্বর শুরু হওয়া আলজেরিয়ার স্বাধীনতার মহাকাব্যিক সংগ্রামকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়। জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন দিয়ে শুরু হওয়া এই অনুষ্ঠানে আলজেরিয়া ও বাংলাদেশের পতাকা তুলে ধরা হয়, পরে আলজেরিয়ার শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন আলহাজ হাফেজ ক্বারী মাওলানা রফিক আহমেদ উসমানী, এবং আল-ফাতিহা পাঠ করেন সারা ইনেস সাইদানি। শান্তি, স্থিতিশীলতা ও কল্যাণ কামনায় বিশেষ মোনাজাত পরিচালনা করেন মাওলানা আনোয়ারুল হক, খতিব, গুলশান জামে মসজিদ।

মূল বক্তব্যে রাষ্ট্রদূত ড. আব্দেলওয়াহাব সাইদানি বলেন, ১৯৫৪ সালের ১ নভেম্বরের মুক্তিযুদ্ধ শুধু রাজনৈতিক আন্দোলন ছিল না—এটি ছিল মানব মর্যাদা, স্বাধীনতা ও ন্যায়ের জন্য এক ঐতিহাসিক সংগ্রাম। তিনি ১৫ লক্ষ শহীদের আত্মত্যাগকে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে বলেন, তাদের রক্তই আজকের আলজেরিয়ার নৈতিক শক্তির উৎস। “Message to Generations” শীর্ষক এ বছরের থিম উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত তরুণদের উদ্দেশে ঐক্য, সাহস এবং ত্যাগের মূল্যবোধ ধারণ করার আহ্বান জানান। তিনি আরও স্মরণ করেন, আলজেরিয়া ছিল বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়া প্রথম আরব দেশ—যা দুই দেশের সম্পর্ককে আরও ঐতিহাসিক করেছে।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সরকার উপদেষ্টা মো. ফওজুল কবির খান, যাকে রাষ্ট্রদূত ঐতিহ্যবাহী আলজেরিয়ান পোশাক ‘বারনুস’ উপহার দেন, তার বক্তব্যে আলজেরিয়ার স্বাধীনতা সংগ্রামকে আধুনিক ইতিহাসের অন্যতম বীরত্বগাঁথা হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ঐক্য, দেশপ্রেম ও ত্যাগের শক্তিই আলজেরিয়াকে স্বাধীনতার পথে নিয়ে গেছে—যা বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসেও প্রতিফলিত। তিনি বাণিজ্য, জ্বালানি, শিপিং, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক খাতে দুই দেশের সহযোগিতা আরও বাড়ানোর আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূতের কন্যা ইলিনা সাইদানি তরুণ প্রজন্মের দৃষ্টিকোণ থেকে বিপ্লবের তাৎপর্য তুলে ধরেন। বিশেষ অতিথি ইঞ্জিনিয়ার এম. এ. রশিদ বক্তব্য প্রদান করেন এবং হাফেজ মাওলানা আরিফ বিন কামাল শহীদদের স্মরণে হৃদয়স্পর্শী একটি কবিতা আবৃত্তি করেন। “The Algerian Revolution and the New Algeria” শিরোনামের প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনীতে বিপ্লবের ইতিহাস ও নতুন আলজেরিয়ার অগ্রযাত্রা তুলে ধরা হয়। অনুষ্ঠান শেষে কেক কাটা, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, বাংলাদেশ আনসার–ভিডিপির সঙ্গীত এবং অতিথিদের পারস্পরিক মতবিনিময়ে পরিবেশ আরও প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।
ঢাকা ডায়লগ-এর নির্বাহী সম্পাদক সজীবুল-আল-রাজীব রাষ্ট্রদূত সাইদানিকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, আলজেরিয়ার বীরত্বগাঁথা সংগ্রাম মানবমুক্তির এক চিরন্তন প্রতীক। তিনি দুই দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সহযোগিতা আরও সম্প্রসারণের ওপর গুরুত্ব দেন।




অনুষ্ঠানে তিনি বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট কূটনীতিকের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ মতবিনিময় করেন, যার মধ্যে ছিলেন পাকিস্তানের হাইকমিশনার ইমরান হায়দার, ব্রুনাই দারুসসালামের হাইকমিশনার হাজি হারিস বিন হাজি ওসমান, মালদ্বীপের হাইকমিশনার শিউনীন রশীদ, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবা ফারজানা, এবং সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ড. আবদুল্লাহ জাফের এইচ. বিন আবিয়াহ। এসব আলোচনায় আঞ্চলিক সহযোগিতা, উন্নয়ন ও কূটনৈতিক বন্ধন জোরদারের বিষয়ে মতবিনিময় হয়।











