চট্টগ্রাম প্রতিনিধিঃ
জনবল সংকটে হিমশিম খাচ্ছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। চাহিদার অর্ধেক জনবল নিয়ে নগরবাসীর পানির চাহিদা পূরণে কাজ করছে সংস্থাটি। জনবল সংকটের মধ্যে পানি উৎপাদন ঠিক রাখতে পারলেও দিন দিন কমছে রাজস্ব আদায়।
চট্টগ্রাম ওয়াসার রাজস্ব বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ওয়াসায় রাজস্ব তত্তবাবধায়ক পদে কেউ নেই। চাহিদার অর্ধেক মিটার পরিদর্শক দিয়ে পুরো নগরীর আবাসিক ও বাণিজ্যিক গ্রাহকদের মিটারের রিডিং নেওয়া হচ্ছে। মূলত ৪০ হাজার গ্রাহকের মিটার পরিদর্শক দিয়ে নেওয়া হচ্ছে ৮০ হাজার গ্রাহকের মিটারের রিডিং।
চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা রুমন দে বলেন, চাহিদার অর্ধেক জনবল দিয়ে আমাদের গ্রাহক সেবা এবং রাজস্ব আদায় কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে। জনবল সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। জনবল সংকটের কারণে রাজস্ব আদায় ব্যাহত হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমাদের ৫০ শতাংশ জনবল সংকট রয়েছে। ৩৭ জন মিটার পরিদর্শক দিয়ে পুরো নগরীর ৮০ হাজার গ্রাহকের মিটার রিডিং চেক করা হচ্ছে। যখন ৪০ হাজার গ্রাহক ছিল তখন ৩৭ জন মিটার পরিদর্শক দিয়ে মিটার রিডিং নেওয়া হতো। এখন ৮০ হাজার গ্রাহক হয়েছে। ৮০ গ্রাহকের মিটারের রিডিং নিচ্ছেন ওই ৩৭ জন মিটার পরিদর্শক। অথচ গ্রাহক এখন দ্বিগুণ হয়েছেন। প্রতি ৮০০ জন গ্রাহকের জন্য ১ জন মিটার পরিদর্শক দরকার। এখন নতুন অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী মিটার পরিদর্শকের পদ রয়েছে ৫৩টি। রাজস্ব তত্তবাবধায়ক দরকার ১০ জন। অথচ এখন একজনও নেই। আরো অনেকগুলো পদে লোকবল সংকট রয়েছে। প্রতি বছরে অবসরে যাচ্ছে; আরো যাবে। অথচ নিয়োগ হচ্ছে না।
প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা বলেন, প্রতি মাসে আবাসিক এবং বাণিজ্যিক গ্রাহকদের কাছে পানির বিল হয় ২১ কোটি টাকা। এর মধ্যে যেন ৯০ শতাংশ আদায় হয়, সেই টার্গেট থাকে। প্রতি মাসে ১৫১৬ কোটি টাকার মতো রাজস্ব আদায় হচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে রাজস্ব আদায় কমে গেছে। এখন প্রতি মাসে ১৩১৪ কোটি টাকায় নেমে গেছে।
চট্টগ্রাম ওয়াসা সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে ওয়াসার সংযোগ আছে ৮৬ হাজার ৩০৯টি। এর মধ্যে আবাসিক গ্রাহক ৭৮ হাজার ৫৪২; বাণিজ্যিক সংযোগ ৭ হাজার ৭৬৭টি। নগরে প্রায় এক হাজার ২০০ কিলোমিটার পাইপলাইনের মাধ্যমে এ পানি সরবরাহ করা হয়। বর্তমানে আবাসিক বাসাবাড়ির গ্রাহকরা এক হাজার লিটার পানি পাচ্ছেন ১৮ টাকায়। বাণিজ্যিক বা অনাবাসিকে গ্রাহকরা একই পরিমাণ পানির জন্য ওয়াসাকে দিচ্ছেন ৩৭ টাকা।
জানা গেছে, গত এক দশকের মধ্যে মিটার রিডার পদে কোনো জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়নি। সহকারী পাম্প অপারেটর থেকে ডেপুটেশনে লোক দিয়ে মিটার রিডারের কাজ করানো হয়। পরে তারা স্থায়ী হওয়ার জন্য নতুন লোক নিয়োগে সিবিএর মাধ্যমে বাধার সৃষ্টি করে। ফলে কয়েকবার লোক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দিয়েও মিটার রিডার নিয়োগ করা যায়নি। বর্তমানে ২ হাজার ২৭১ জন গ্রাহকের বিপরীতে একজন করে মিটার রিডার আছেন। যে কারণে ওয়াসার বিলে অব্যবস্থাপনার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। অনেক মিটার রিডারের বিরুদ্ধেও আছে অভিযোগ। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিল কম দেখিয়ে গ্রাহক থেকে আর্থিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে।