December 1, 2025

শিরোনাম
  • Home
  • আন্তর্জাতিক
  • কোরিয়া–বাংলাদেশ সম্পর্ক আরও গভীর করার অঙ্গীকার কোরিয়ান রাষ্ট্রদূত পার্ক ইয়ং-শিকের

কোরিয়া–বাংলাদেশ সম্পর্ক আরও গভীর করার অঙ্গীকার কোরিয়ান রাষ্ট্রদূত পার্ক ইয়ং-শিকের

Image

বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর ২০২৫) ঢাকায় দক্ষিণ কোরিয়া দূতাবাসের উদ্যোগে জাতীয় দিবস National Foundation Day of the Republic of Korea 2025 উদযাপিত হয়েছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।

অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় ড. আসিফ নজরুল বলেন, কোরিয়ার সংস্কৃতি, চলচ্চিত্র ও উদ্ভাবন তাকে গভীরভাবে আকৃষ্ট করে। তার স্ত্রী কোরিয়ার স্কিনকেয়ার পণ্যের ভক্ত এবং দুই মেয়েই কোরিয়ান সঙ্গীত, বিশেষ করে বিটিএস-এর অনুরাগী—যা তাদের পরিবারের কোরিয়ার সঙ্গে বিশেষ সম্পর্কের প্রতিফলন। তিনি কোরিয়ার জাতীয় দিবস উপলক্ষে আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ১৯৭৩ সালে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পর থেকে দুই দেশের বন্ধুত্ব পারস্পরিক সম্মান, আস্থা ও উন্নয়নের ভিত্তিতে ধারাবাহিকভাবে এগিয়ে চলেছে। তিনি চট্টগ্রামের কোরিয়ান ইপিজেডসহ ইলেকট্রনিকস, অবকাঠামো, জ্বালানি ও আইসিটি খাতে কোরিয়ান বিনিয়োগ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার কথা উল্লেখ করেন।

প্রবাসী শ্রমিকদের বিষয়ে তিনি কোরিয়ার Seasonal Worker Program-এর প্রশংসা করে বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য কর্মসংস্থানের নতুন সম্ভাবনা উন্মোচনে বেশ কিছু প্রস্তাব তুলে ধরেন। এর মধ্যে রয়েছে—কৃষি ও লাইভস্টক সেক্টরকে অন্তর্ভুক্ত করা, কেয়ারগিভিং ও সার্ভিস সেক্টরে পাইলট রিক্রুটমেন্ট চালু করা, অভিজ্ঞ শ্রমিকদের ১০–১২ বছর পর্যন্ত পুনঃনিয়োগের সুযোগ দেওয়া, ইপিএস প্রোফাইলের মেয়াদ দুই বছর থেকে পাঁচ বছর করা এবং ১:৩ রেশিওর পরিবর্তে নিয়মিতভাবে জব সেন্টারের মাধ্যমে সমন্বিত প্রোফাইল জমাদানের ব্যবস্থা চালু করা। শ্রমিকদের স্বচ্ছতা, কল্যাণ ও অধিকার নিশ্চিত করতে তিনি যৌথ ডিজিটাল মনিটরিং সিস্টেম প্রবর্তনের প্রস্তাব দেন।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত পার্ক ইয়ং-শিক বলেন, চার হাজার বছরেরও বেশি ইতিহাস সমৃদ্ধ কোরিয়ার জাতীয় দিবস ‘গেচনজল’ কোরিয়া জাতির ঐতিহ্য, ঐক্য ও মূল্যবোধের প্রতীক। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পর গত পাঁচ দশকে দুই দেশের সহযোগিতা বহুমাত্রিকভাবে বিস্তৃত হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, ১৯৭৯ সালে ডেসং গভর্নমেন্ট ও ডিএই কর্পোরেশনের যৌথ উদ্যোগ বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের ভিত গড়ে দেয়, যা আজ দেশের মোট রপ্তানির ৮৫ শতাংশেরও বেশি। বর্তমানে কোরিয়া বাংলাদেশের চতুর্থ বৃহত্তম বৈদেশিক বিনিয়োগকারী, বিশেষ করে অটোমোবাইল, মোবাইল ফোন, ইলেকট্রনিকস ও উৎপাদন খাতে দ্রুত বিনিয়োগ বাড়ছে।

রাষ্ট্রদূত জানান, দুই দেশের মধ্যে Comprehensive Economic Partnership Agreement (CEPA)-সংক্রান্ত আলোচনাগুলো সম্পন্ন হলে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ আরও বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি বাংলাদেশে টেকসই অবকাঠামো নির্মাণে কোরিয়া আগের মতোই নির্ভরযোগ্য ও সক্ষম উন্নয়ন সহযোগী হতে চায়। তিনি আরও বলেন, কোরিয়ার উন্নয়ন সহযোগিতা (ODA) শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পানি ও স্যানিটেশন, গণপ্রশাসন এবং পরিবহন খাতে বাংলাদেশের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে অবদান রাখছে।

রাষ্ট্রদূত পার্ক জানান, ২০০৮ সাল থেকে ৩০ হাজারের বেশি বাংলাদেশি কর্মী ইপিএসের আওতায় কোরিয়ায় গেছেন, এবং কর্মক্ষেত্রে প্রতিযোগিতামূলক হতে হলে তাদের কোরিয়ান ভাষা দক্ষতা আরও বাড়ানোর প্রয়োজন রয়েছে। পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের জন্য কোরিয়ার মানবিক সহায়তার বিষয়টি তিনি উল্লেখ করেন—২০২৪ সালে ১৫ হাজার টন চাল ও ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দেওয়ার পর সাম্প্রতিক সময়ে আরও ২০ হাজার টন চাল সরবরাহ করা হয়েছে, যা প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গার দুই মাসের খাদ্য সহায়তা নিশ্চিত করতে সক্ষম।

কোরিয়ান সংস্কৃতি ও হ্যালিউ তরঙ্গ (Korean Wave) সম্পর্কে রাষ্ট্রদূত বলেন, কোরিয়ান নাটক, চলচ্চিত্র, কে-পপ, খাবার ও বিউটি পণ্যের জনপ্রিয়তা বাংলাদেশে দুই দেশের জনগণের মধ্যে বোঝাপড়া ও বন্ধনকে আরও শক্তিশালী করছে। অনুষ্ঠানে তাইকোয়ান্ডো ও বাংলাদেশি কে-পপ ডান্স টিমের পরিবেশনা উপস্থিত অতিথিদের আকর্ষণ করে।

অনুষ্ঠানে কূটনীতিক, ব্যবসায়ী, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিসহ নানা শ্রেণি-পেশার অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।

Scroll to Top