রাজস্ব আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল চালিকা শক্তি। রাজস্ব আয়ের তিনটি মূখ্য খাত আয়কর, ভ্যাট এবং কাস্টমস। এ তিনটি খাতের মাধ্যমে জাতীয় রাজস্ব বৃদ্ধি যেমন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মূখ্য কাজ, তার চেয়ে বেশী কঠিন কাজ হলো এ খাতসমূহের সকল স্টেকহোল্ডারদের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি পলিসি প্রণয়ন ও প্রয়োগের মাধ্যমে রাজস্ব আহরণ। এ তিনটি খাতে সেবা দাতা ও সেবা গ্রহিতাদের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ও আন্তরিক সম্পর্ক বৃদ্ধি এবং উভয়ের সময়, অর্থ ও শ্রম সাশ্রয় করে কিভাবে উভয় কাজে সাফল্য অর্জন করা যায় সে উদ্দেশ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড গ্রহন করে অনলাইনে ঘরে বসে আয়কর রিটার্ণ দাখিল, অনলাইনে ভ্যাট রিটার্ণ দাখিল এবং কাস্টমস বন্ড সংক্রান্ত সকল সেবা পাওয়ার আবেদন ঘরে বসে অনলাইনে দাখিল সংক্রান্তে অটোমেশন প্রকল্প। এ তিনটি প্রকল্প এখনই শতভাগ ব্যবহার উপযোগি। সকল সেবা গ্রহীতাকে অনলাইনে সেবা গ্রহনের পদ্ধতিতে সাবলিল করাই হলো এখন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মূখ্য উদ্দেশ্য।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস এক্সেসরিজ ও প্যাকেজিং দেশের সর্ববৃহৎ পশ্চাৎসংযোগ শিল্প খাত। এ খাতের দুই হাজার একশত শিল্প প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিত্ব করে বাংলাদেশ গার্মেন্টস এক্সেসরিজ ও প্যাকেজিং ম্যানুফ্যকাচারার্স এন্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশন (বিজিএপিএমইএ)। এর অধিকাংশ সদস্যই বন্ডেড ওয়্যার হাউসের সুবিধা ভোগ করে সকল গার্মেন্টস এক্সেসরিজ, প্যাকেজিং ও ট্রিমস পণ্য উৎপাদন করে
থাকে। আরএমজি খাত জাতীয় রপ্তানির শতকরা ৮৪% আয় করে থাকে। আরএমজি খাত তাদের শতভাগ এক্সেসরিজ ও প্যাকেজিং পণ্যের সরবরাহ আভ্যন্তরীণভাবে এ সমস্ত দেশীয় শিল্প প্রতিষ্ঠান হতে পায় বিধায় তাদের এ সাফল্য।
বিজিএপিএমইএ তাদের ২ হাজার ১০০ সদস্য প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন ও সেবা প্রাপ্তি সহজ হতে সহজতর করার জন্য কাজ করে থাকে। বিজিএপিএমইএ তার সকল সদস্য প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরকে প্রশিক্ষনের মাধ্যমে অনলাইন সিস্টেমে কাস্টমস বন্ড ম্যানেজমেন্ট অটোমেশন সিস্টেমে অনবোর্ড হওয়া এবং ইউপিসহ অন্যান্য সেবার আবেদন দাখিল সম্পর্কে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাস্টমস বন্ড অটোমেশন প্রকল্পের সহায়তায় একটি প্রশিক্ষণ কর্মসূচী গ্রহন করেছে।

এ প্রশিক্ষণ সূচীর সূচনা পর্বে ১ম ব্যাচে বিজিএপিএমইএ এর বিভিন্ন সদস্য প্রতিষ্ঠানের ৬০ জন প্রতিনিধির প্রশিক্ষণ হলো আজ সোমবার (৪ নভেম্বর, ২০২৪) জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ৫১১নং সম্মেলন কক্ষে। সেবা প্রদান করা তথা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাস্টমস, ভ্যাট ও আয়কর বিভাগের কর্মকর্তা-
কর্মচারী এবং সেবা গ্রহীতা তথা বিজিএপিএমইএ এর সদস্য প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে পারস্পরিক সম্পৃতি বৃদ্ধি ও অটোমেশন প্রকল্পে সেবা প্রদানে এবং সেবা গ্রহনে উৎসাহিত করতে প্রশিক্ষনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সুযোগ্য চেয়ারম্যান জনাব মো. আবদুর রহমান খান, এফসিএমএ। তিনি দুই হাজার সদস্য প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেককে অটোমেশন পদ্ধতিতে সেবা গ্রহনে উৎসাহিত করতে বন্ড অটোমেশন প্রকল্পের মাধ্যমে বিজিএপিএমইএ কর্তৃক প্রশিক্ষনের আয়োজন করায় বিজিএপিএমইএ-কে ধন্যবাদ প্রদান করেন। তিনি মোবাইল ফোন শুরুর পর্যায় থেকে বর্তমানে জনপ্রিয়তা ও ব্যবহারকারীর সংখ্যার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন যে, বন্ড অটোমেশন পদ্ধতিতে সেবা গ্রহনও আপনাদের নিকট জনপ্রিয় হবে। তিনি আয়কর রিটার্ণ দাখিলে রিটার্ণ দাখিলকারীকে আয়কর অফিসে উপস্থিত না হয়ে অনলাইনে ঘরে বসে যাতে সহজেই আয়কর রিটার্ণ দাখিল করতে পারেন সে বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য মাননীয় প্রধান
উপদেষ্টা সরাসরি তাঁকে নির্দেশনা প্রদান করেছেন বলে জানান। মাননীয় প্রধান অতিথি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড হতে প্রদত্ত সকল সেবা শতভাগ অনলাইন ভিত্তিক করা হয়েছে বলে অবহিত করেন। তিনি পুরাতন বন্ড লাইসেন্সধারীকে একটি নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে সকল তথ্য অনবোর্ড করার দিন ধার্য্য করে পত্র প্রদানের জন্য এবং ইউপিসহ অন্যান্য সেবা প্রদান অনলাইন ও ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ পর্যন্ত প্রদান করার জন্য সংশ্লিষ্টদেরকে নির্দেশনা প্রদান করেন। তিনি অটোমেশন পদ্ধতির ব্যবহার প্রয়োজনে সেক্টরভিত্তিক ডেড লাইন নির্ধারণ করে বাধ্যতামূলক করার পরামর্শ দেন। সিঙ্গেল উইন্ডো পদ্ধতি চালু হলে ব্যবসা সংশ্লিষ্ট ৪৪টির মতো সেবা একটি উইন্ডো থেকে গ্রহন করা যাবে এবং তখন বন্দরের প্রদত্ত সেবাও অনলাইন ভিত্তিক ও সহজ হবে বলে জানান। তিনি মন্তব্য করেন, করদাতার কোন দোষ না থাকা স্বত্তে¡ও শুধু পদ্ধতি জনিত ত্রুটির কারনে তাকে জরিমানা ও হয়রানির স্বীকার হতে হয়। তিনি ভ্যানুসহ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সকল সুযোগ-সুবিধা এ ধরনের প্রশিক্ষনের জন্য উন্মুক্ত বলে জানান এবং ব্যবহারের জন্য আহবান জানান। বন্ড অটোমেশন পদ্ধতিকে সকল পর্যায়ে জনপ্রিয় করার জন্য বৃহৎ পরিসরে এরূপ ওয়ার্কশপের আয়োজন করার জন্য অটোমেশন প্রকল্প সংশ্লিষ্টদেরকে নির্দেশনা প্রদান করেন।
প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের প্রতি একাত্বতা প্রকাশ ও সহযোগিতার আশ্বাস নিয়ে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য (কাস্টমসঃ বন্ড, রপ্তানি ও আইটি) জনাব মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন। কাস্টমস বন্ড অটোমশেন সিস্টেমে সেবা প্রদানের কয়েকটি সমস্যার বিষয়ে উল্লেখ করে বক্তব্য দেন অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট ঢাকা (উত্তর) এর কমিশনার জনাব আবুল বাসার মো. শফিকুর রহমান। কাস্টমস বন্ড অটোমেশন প্রকল্প বাস্তবায়নের মূখ্য কর্মকর্তা জনাব মোহাম্মদ ফাইজুর রহমান, প্রকল্প পরিচালক উপস্থিত ছিলেন গেস্ট অব অনার হিসেবে। তিনি বিজিএপিএমইএ এর সকল সদস্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদেরকে প্রশিক্ষণে সহায়তা দেয়ার আশ্বাস প্রদান করেন এবং সিবিএমএস প্রকল্পের ভূমিকাসহ বাস্তবায়ন সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন দেন। অনুষ্ঠানে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সিনিয়র কর্মকর্তাবৃন্দ, কাস্টমস বন্ড ম্যানেজমেন্ট অটোমেশন
কর্মকর্তাবৃন্দ, অটোমেশন সফট্ওয়্যার কোম্পানী ’রিভ সিস্টেম’ এর কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বিজিএপিএমইএ এর প্রাক্তন সভাপতি জনাব রাফেজ আলম চৌধুরী সূচনা বক্তব্য প্রদানের সময় আমদানি প্রাপ্যতা ২ বছরের জন্য প্রদান, ইউডি জারীর ক্ষমতা এসোসিয়েশনকে প্রদান, কন্টিনিউয়াস বন্ডের সুবিধা প্রদানসহ অন্যান্য সুবিধাগুলো বিজিএপিএমইএ এর সদস্য প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে বর্ধিত করার এবং সিবিএমএস সিস্টেমে অনবোর্ড হওয়ার সময় ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৪ তারিখ পর্যন্ত বর্ধিত করার অনুরোধ করেন।
অনুষ্ঠানটিতে সভাপতিত্ব করেন ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত বিজিএপিএমইএ-তে ১ম বার ভোটারদের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত সভাপতি জনাব মো. শাহরিয়ার। তিনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সকল কর্মকর্তা বিশেষ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান জনাব মো. আবদুর রহমান খান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকায় তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ও ধন্যবাদ জানান। তিনি কাস্টমস বন্ড অটোমেশন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালককে বিজিএপিএমইএ আয়োজিতব্য প্রশিক্ষনে সহায়তা প্রদানের আশ্বাস প্রদান করায় তাঁকে ধন্যবাদ জানান।
তিনি প্রধান অতিথির উদ্দেশ্যে বলেন, গার্মেন্টস এক্সেসরিজ ও প্যাকেজিং সেক্টর দেশের সকল রপ্তানি খাতের এক্সেসরিজ ও প্যাকেজিং চাহিদার শতভাগ পূরণ করতে সক্ষম তা কোভিড-১৯ পেনডামিক জনিত সময়ে প্রমানিত। কেননা, সে সময় মেডিক্যাল সামগ্রী ছাড়া অন্যান্য সকল সামগ্রীর আমদানি নিষিদ্ধ ছিল। এক্সেসরিজ ও প্যাকেজিং সরবরাহ নিশ্চিত থাকায় সে সময়েও পোশাক খাতের রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছিল। তিনি পোশাক খাতের ন্যায় এক্সেসরিজ ও প্যাকেজিং খাতে বন্ডেড ওয়্যারহাউসের সুবিধা বর্ধিতকরনের অনুরোধ করেন।
ধন্যবাদ জ্ঞাপনে বিজিএপিএমইএ এর প্রাক্তন সভাপতি ও বর্তমান উপদেষ্টা জনাব মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন মতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের এবং কাস্টমস বন্ড অটোমেশন প্রকল্পের কর্মকর্তাবৃন্দকে এবং সফট্ওয়্যার ডেভোলপার কোম্পানী রিভ সিস্টেমের কর্মকর্তাদেরকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বিশেষ করে ধন্যবাদ জানান প্রশিক্ষনে অংশগ্রহনকারী প্রশিক্ষণার্থীদেরকে। ধন্যবাদ জ্ঞাপনের পাশাপাশি কাস্টমস হাউস হতে প্রদত্ত সেবাসমূহ অধিক ব্যবহারকারীবান্ধব এবং দ্রুত করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, দ্রুততার সাথে আমদানিকৃত মালামাল খালাস করা সম্ভব হলে বিলম্ব মাশুল এবং কন্টেননার ডেমারেজ চার্জ ব্যবসায়ীদের বহন করতে হবে না। তিনি যুক্ত করেন, বিলম্ব মাশুল সরকার পেলেও কন্টেইনার ডেমারেজ চার্জ সরকার পায় না। তিনি আজকের অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্টনিক মিডিয়ার সাংবাদিক ভাই ও বোনদেরকেও বিশেষ ধন্যবাদ প্রদান করেন এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও বিজিএপিএমইএ এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত আজকের এ প্রশিক্ষণ কর্মসূচীর সংবাদ তাদের নিজ নিজ মিডিয়ায় প্রচার করার জন্য অনুরোধ করেন।
বিজিএপিএমইএ এর নেতৃবৃন্দের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন সভাপতি জনাব মো. আব্দুল কাদের খান, ২য় সহ-সভাপতি জনাব মো. মনিরুজ্জামান মোল্লা, সহ-সভাপতি (অর্থ) জনাব মোজাহারুল হক শহীদ, পরিচালক জনাব মোহাম্মদ বেলাল, জনাব মোহাম্মদ ফিরোজ উদ্দিন, মো. সাইফুল ইসলাম সবুজ, কাজী আশরাফুল হক জুয়েল, পরিবেশ সংμান্ত স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান মুন্সী এ. কে. আজাদ।